চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি

পেস্তা বাদামের উপকারিতা জানুন প্রিয় পাঠক আপনি কি চিরা খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাকে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি
ধান থেকে চাল প্রস্তুত করার একটি মধ্যবর্তী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা চিড়া পেয়ে থাকি।চিড়া বাংলাদেশের ও ভারতে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার।তবে অনেকেই জানেনা চিড়া খাওয়ার নিয়ম, চিড়ার পুষ্টিগুণ, চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিস চিড়া খাওয়া যাবে কিনা সেই সম্পর্কে।তাই সকলের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলটি চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি

চিড়া খাওয়ার নিয়ম

চিড়া খাওয়ার নিয়ম খুবই সহজ এটি আপনাকে কষ্ট করে রান্না করে খেতে হবে না। চিড়া হচ্ছে সহজপাচ্য ও হালকা বলে এটি শুধুমাত্র পানিতে ধুয়ে নিলেই হবে।চিড়া খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এর সঙ্গে দই, দুধ, চিনি, খেজুর, বা গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন।
এছাড়া আপনি চাইলে কলা দিয়েও চিড়া খেতে পারেন।চিড়া সাধারণত দুই ভাবে খাওয়া যায় শুকনো অবস্থায় বা ভিজা অবস্থায়।তবে সকালে খালি পেটে চিড়া খেলে বেশি উপকৃত হবেন। যে কোন খাবারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে আশাকরি চিড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

চিড়ার পুষ্টিগুণ

আমরা যে সকল শুকনো খাবার খাই তার মধ্যে চিড়া হচ্ছে অন্যতম এবং জনপ্রিয় একটি খাবার। এই চিড়ার রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার।চলুন জেনে নেই ১০০ গ্রাম চিড়ার পুষ্টিগণ সম্পর্কে।

প্রোটিন: প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়ার মধ্যে আপনি প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন পাবেন। যা আপনার দৈনিক চাহিদার প্রায় ১২% পূরণ করতে সক্ষম করে।

ক্যালোরি: আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম চিড়া খান তাহলে প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়াতে আপনি প্রায় ৩৪৫ গ্রাম ক্যালোরি পাবেন।যা আপনার শরীরের দৈনিক চাহিদার প্রায় ১৭% পূরণ করতে সক্ষম হবে।

ফাইবার: ফাইবার হচ্ছে হজমের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।ফাইবারের পরিমাণ খুব কম প্রায় ০.৪ গ্রাম।যা সাধারণত আমাদের দৈনিক চাহিদার মাত্রা এক থেকে ১থেকে ২% বজায় রাখে।

ফ্যাট: চিড়ার মধ্যে অল্প পরিমাণে ফ্যাট থাকে যেটা আমাদের তেমন একটি গ্রহণযোগ্য নয়। ১০০ গ্রাম কীরার মধ্যে মোট ফ্যাটের পরিমাণ হয় মাত্র এক গ্রাম।

এছাড়াও চিড়ার মধ্যে আরো কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যেমন কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং মিনারেল। এ সকল উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।এ সব গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আমরা চিড়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এতক্ষণে চিড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা হয়েছে এবার চলুন জেনে নিচ্ছি চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

চিড়া রান্না করে খেতে হয় না বলে অনেকেই পছন্দ করে থাকে তবে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা অনেকেই জানেনা। চিড়া এমন একটি শুকনো খাবার যেটা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষও খেতে পারে।চলুন জেনে নেই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
  • নিয়মিত চিড়া খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় সকল সমস্যা যেমন বদহজম, পেট ফাঁপা ইত্যাদি পেটের সকল সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যায়।
  • চিড়া খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং পেটের মধ্যে ডায়রিয়ার বা আমাশয় রোগের জন্য চিড়া খুব উপকার। যাদের পেটের মধ্যে ডায়রিয়া সমস্যা রয়েছে তারা কিছু পরিমাণ চিড়া ভিজিয়ে খান সাথে সাথে উপকৃত হবেন।
  • প্রতিনিয়ত চিড়া খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সিরাপের পরিষ্কারের সাহায্য করে।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত চিড়ক খেতে পারেন চিড়া খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের থাকে। কারণ চিড়াতে সোডিয়াম এর পরিমাণ কম রয়েছে যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
  • চিড়া খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁত এবং মাড়ি ভালো থাকে কারণ চিড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের দাঁত ও মাড়িকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে বা ওজন কমাতে চিড়া খাওয়া খুবই ভালো। কারণ নিয়মিত চিড়া ভিজিয়ে খেলে ওজন কোনভাবেই বৃদ্ধি পায় না বরং ওজন সব সময় স্বাভাবিক থাকে।কারণ চিড়া সম্পূর্ণ চর্বিমুক্ত।
  • যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বা কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগছেন তাদের জন্য চিড়ার মত সহজ খাবার আর হতে পারে না। চিড়া হলো সহজপাচ্য খাবার আমাদের পেটকে আরাম দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে খুব সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে। যার ফলে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং কোষ্ঠিকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায়
  • যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিড়া খেতে পারেন কারণ চিড়ার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটাই কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য চিড়া খুব উপকারী।
এছাড়া যারা দীর্ঘ সময় সমুদ্রে যাত্রা করেন তাদের সব থেকে প্রথম খাদ্য তালিকায় থাকে চিড়া কারণ চিড়া অনেক সময় ধরে থাকে এবং এটা খেতে কোন জ্বালা লাগেনা। আশা করি চিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তবে আপনি যদি চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিড়া খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

গর্ভাবস্থায় চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে অনেক ক্যালরি ঘাটতি হয়ে থাকে।সেই সকল ঘাটতি পূরণ করতে এবং সঠিক পরিমাণে প্রোটিন শরীরে পেতে হলে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় চিড়া রাখতে হবে।কারন চিড়ার মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি অনেক ক্যালোরিও রয়েছে যা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য অনেক প্রয়োজন।
গর্ভবতী নারী ও পেটে থাকা শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য চিড়া অনেক ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরের ক্যালরির ঘাটতি পূরণ করতে হলে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় চিড়া রাখা উচিত এর পাশাপাশি আপনি দুধ, দই, কলা, মাখন,খেজুর পুডিং এ সকল পুষ্টিকর খাবার রাখতে পারেন।

দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

গরমের দিনে বেশিরভাগ বাঙালিদের প্রিয় খাবারই হচ্ছে দই চিড়া। দই চিড়া একসাথে খাওয়ার ফলের শরীর খেয়ে ঠান্ডা রাখে এটাতে কোন সন্দেহ নাই।দই চিরা শুধু শরীরকে ঠান্ডা করে না দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে আরো অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপর ভিত্তি করে পরিবারের সবার জন্যই স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাওয়া উচিত।যা শরীরের শক্তি জোগাবে।

বেশিরভাগ মানুষ রমজান মাসে ইফতারের সময় দল চিড়া বেশি খেয়ে থাকে। চিড়ার মধ্যে আশেঁর পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে যার ফলে ডায়রিয়ার মতো কঠিন সমস্যা সহ পেটের নানা রকম সমস্যা দূর হয়ে যায়। দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মতে চিড়ার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম সোডিয়াম এর পরিমাণ কম থাকার জন্য কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী একটি খাবার।

একসাথে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের পানির অভাব অতি দ্রুত পূরণ করে এবং একসঙ্গে ক্ষুদা ও মেটায়।এছাড়া দুই চিড়া প্রতিদিন খাওয়ার ফলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি হবে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে, মানসিক প্রশান্ত দিবে, পেটের ঠান্ডা রাখবে এবং শরীর শীতল রাখার পাশাপাশি আপনার ত্বক সুন্দর করবে।

তাই চেষ্টা করবেন মাঝে মাঝে দই চিড়া একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য। আশা করি এতক্ষণে জানতে পেরেছেন দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবার চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কিনা।

ওজন কমাতে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে অথবা ওজন কমাতে চাইলে আপনার খাদ্য তালিকায় চিড়া রাখতে পারেন। কারন চিড়া অতি সহজে হজম হয় যার ফলে আপনার শরীরের বিপাকীয় হার বারে। পুষ্টিবিদদের মতে ১০০ গ্রাম চিড়ার মধ্যে যে সকল উপাদান রয়েছে যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের জন্য চিড়া হতে পারে অন্যতম একটি খাবার।কারণ চিড়া কংকালুযুক্ত খাবার হয় এটি ওজন কমানোর জন্য অতি আদর্শ খাবার।
যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত বা ওজন কমাতে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য চিড়া খাদ্য তালিকায় রাখা অতি জরুরী।আশা করি ওজন কমাতে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা জানতে পেরেছেন। আপনার যে সকল বন্ধুরা ওজন নিয়ে চিন্তিত আশা করি তাদেরকে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন যাতে তারাও ওজন কমাতে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা গুলো জানতে পারে।

ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি

বর্তমানে অনেক মানুষই গুগলে এ সার্চ করে থাকে ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি না।ডায়াবেটিস একটি মহামারীর রোগ হিসেবে ধরা যায়। যার কারণে দিন দিন মানুষের ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়ছে। ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি খাদ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকা অতি জরুরি বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু কিছু চিড়াতে চিনি ও কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে, যার ফলে শরীরের রক্তের শর্করা স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ বাইরে চলে যেতে পারে।

সুতরাং চিড়া খাওয়ার আগে আপনার ডায়াবেটিস মেপে নিবেন এবং কিছু চিড়া রয়েছে যেগুলোতে চিনির পরিমাণ অনেকটাই কম।তবে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সকল খাবার খাবেন।আমার মতে আপনি চিড়া খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

শেষ কথা

চিড়া হচ্ছে অতি পছন্দের খাবার এবং এটি এক ধরনের শুকনো খাবার যা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালে সবথেকে বেশি পছন্দ করে।তবে সবাই এই চিড়া খাওয়া পছন্দ করলেও অনেকেই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা, চিড়া খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় চিড়া খাওয়ার উপকারিতা, দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা, ওজন কমাতে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি না সে সম্পর্কে জানে না।

তাই সকলের সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেলে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি না সে সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যদি এই আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন যাতে তারাও চিড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url