কুরবানী কাদের উপর ফরজ,কুরবানীর ইতিহাস ও কুরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৪

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য করে আমরা কুরবানী দিয়ে থাকি।তবে আমরা অনেকেই জানিনা কুরবানীর ইতিহাস, কুরবানী কাদের উপর ফরজ, কুরবানীর নিয়ম, কুরবানীর গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে। তাই সকল মুসলমানদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলটি কুরবানির ইতিহাস নিয়ে।
কুরবানী কাদের উপর ফরজ
কুরবানী হলো মুসলমানদের একটি ইবাদত যা প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে আসে।এবং এই ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করার জন্য ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী দিয়ে থাকে।এই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী করতে হবে তাহলেই আল্লাহ তায়ালার নিকটে কুরবানী গ্রহণযোগ্য হবে।কুরবানীর ইতিহাস কুরবানী কাদের উপর ফরজ এবং কুরবানী ঈদ কত তারিখে ২০২৪ জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃ কুরবানী কাদের উপর ফরজ ও কুরবানীর ইতিহাস

কুরবানীর ইতিহাস

আরবিতে করব বা কুরবান বলা হয় তবে ফার্সীতে ও উর্দুতে কুরবানী নামে রূপান্তরিত। কুরবানীর অর্থ হলো নৈকট্য বা সান্নিধ্য।মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে একমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সে ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য কিছু ইবাদত ফরজ করেছেন আর কিছু ইবাদত ওয়াজিব করেছেন।
মুসলমানদের অবশ্যই উচিত আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য সে সকল ফরজ ও ওয়াজিব গুলো সঠিকভাবে পালন করে আল্লাহকে রাজি খুশি ও সন্তুষ্ট করার। কুরবানির ইতিহাসে প্রথম কুরবানীদাতা হলেন আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এর পুত্র সন্তান হাবিল ও কাবিল।হাবিল ও কাবিলের কুরবানির করার কথা পবিত্র আল কুরআন থেকে জানা যায়।

যখন আদম ও হাওয়া (আ.)এর পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন বংশবিস্তারে আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ:) এরপর ভয় থেকে প্রতিবার জোড়া সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।একসাথে প্রতিবার একটি করে পুত্র সন্তান ও একটি করে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। কেবল শীস আঃ ব্যতীত, কারণ তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।আদম আলাই সালাম এর যে সকল সন্তান ছিল তারা ভাই-বোন ছাড়া আর কোন সন্তান ছিল না।

অথচ ভাইবোন পরস্পর বিবাহ বন্ধন আবদ্ধ হতে পারেনা নিষেধ ছিল। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম আঃ এর শরীয়তের বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে একই গর্ভ থেকে যে সকল সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তারা পরস্পর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের পরস্পর বিবাহ আবদ্ধ হওয়া যাবে না হারাম হিসেবে গণ্য করা হবে।

কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে যে সকল ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ হবে সেই ছেলের সাথে প্রথম গর্ভের জন্মগ্রহণ করা কন্যা সন্তানের সাথে বিবাহ করানো যাবে। ঠিক সেই সময় আদম আ: এর একটি জোড়া মেয়ের সাথে অর্থাৎ যমজ মেয়ের সাথে তার জোড়া ছেলের বিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘটনা ক্রমে কাবিলের সাথে যে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে খুব সুন্দরী তার নাম ছিল আকলিমা।

কিন্তু হাবিলের সাথে যেই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে একটু সুন্দর কম বা কুশ্রী ও কদাকার তার নাম ছিল লিওযা।কুরবানির ইতিহাসের মূল ঘটনা সেখান থেকে শুরু হয়।আদম আ: তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিল ও হাবিল এর বিয়ে শুরু করা হয়।তবে লিওযা এর সাথে যার বিবাহ ঠিক হয়েছিল সে বিবাহ করতে রাজি ছিল না কারণ সে দেখতে তেমন সুন্দরী ছিল না।

তবে আদম আলাই সাল্লাম তার আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে নির্দেশ মানতে বলেন কিন্তু সে মানলো না। এবার তিনি তাকে বকা ঝকাশুরু করলেন এবং বুঝাতে লাগলেন তাও সে বুঝলো না। অবশেষে আদম আ: তার এই দুই সন্তান হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্য করে বললেন তোমরা দুই জনই আল্লাহর উদ্দেশ্য করে আল্লাহকে রাজি খুশি করানোর জন্য কুরবানী পেশ কর যার কোরবানি কবুল হবে তার সাথে আকলিমার বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে।

সেই সময় কোরবানি কবুল হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানীকে ভুষ্মীভূত করে ফেলতে।আর যার কোরবানি কবুল হতো না তারটা জমিনে পড়ে থাকতো।কোরবানির ইতিহাসের মধ্যে কাবিল ছিল একজন চাষী তাই তিনি গমের শিষ্য থেকে ভালো ভালো মাল গুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলো একটি আটি কোরবানির জন্য পেশ করল।

আর হাবিল ছিল একজন পশু পালনকারী তাই সে তার সবথেকে পছন্দের যে দুম্বাটি ছিল সে দুম্বাটি কোরবানির জন্য পেশ করলো।অতঃপর কোরবানির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে হাবিলের যেই পছন্দের দুম্বাটি ছিল সেটি নিয়ম অনুযায়ী অগ্নিশিখা এসে ভুষ্মীভূত করে দিলো। অর্থাৎ হাবিলের কুরবানীর টি গৃহীত বা বা কবুল হলো আর কাবিলের টি হলো না।

কিন্তু রাগে ক্ষোভে কাবিল এই আসমানের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। তখন কাবিল তার ভাই হাবিলকে রাগের মাথায় হত্যা করতে চায়। তবে হাবিল তখন ক্রোধের জবাব ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি নীতিগত উচ্চারণ করলেন :মহান আল্লাহতালা মুক্তাকির কর্মই গ্রহণ করেন সুতরাং তুমি তাকওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমার কোরবানিও গৃহীত হতো।

এই কথা শুনে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। কুরআনের বর্ণিত হাবিল ও কাবিল কর্তৃক সম্পর্কিত কুরবানির এই ঘটনা থেকে মূলত কুরবানির ইতিহাস শুরু হয়।
আশা করি সবাই কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি।

কুরবানীর ঈদ কত তারিখে

কুরবানীর ঈদ কত তারিখে বা ঈদুল আযহা ২০২৪ কত তারিখে এ বিষয়ে জানতে প্রায় অনেক মানুষ গুগলে সার্চ করে থাকেন। এই বিষয়ে যারা জানতে চাচ্ছেন তারা আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমরা সাধারণত সৌদি আরব, কাতার, ওমান, আরব আমিরাত এই সকল দেশের পরের দিন আমরা ঈদ পালন করে থাকি।
সে হিসেবে ২০১৪ সালে আরবি মাস অনুযায়ী ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে জুন মাসের ১৬ তারিখে সৌদি আরব, ওমান, আরব আমিরাত, কাতার এ সকল দেশে কোরবানির ঈদ পালন করা হবে সুতরাং সেই হিসেবে বাংলাদেশের কুরবানির ঈদ হচ্ছে জুন মাসে ১৭ তারিখে।

কুরবানী কাদের উপর ফরজ

মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবাই করে নিজের ত্যাগ স্বীকার করার নামই হলো কুরবানি।আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রতিবছর কুরবানী করতেন। যাদের উপর যাকাত ওয়াজিব তাদের উপর কুরবানির ওয়াজিব। প্রাপ্তবয়স্ক বা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নারী পুরুষ যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত

পর্যন্ত সময়ের ভিতরপ্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব। নেসাব পরিমাণ এর ক্ষেত্রে স্বর্ণের পরিমাণ সাড়ে সাত ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ ভরি আর টাকা পয়সা বা অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো এগুলোর মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে।
এছাড়া যদি আপনার সোনা বা রুপা অথবা টাকা পয়সা এগুলো কোন একটি যদি পৃথক ভাবে নেসাব পরিমাণ না হয়ে থাকে তাহলে আপনার অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে যদি সাড়ে ৫২ তোলার রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও আপনার জন্য কুরবানী ওয়াজিব। আশা করি কুরবানী কাদের উপর ফরজ তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন জেনে নেই আমরা কুরবানির নিয়ম সম্পর্কে।কুরবানির নিয়ম জানতে হলে নিচের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কুরবানীর নিয়ম

আল্লাহ তালার কাছে কুরবানীর কবুল হওয়ার জন্য বা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম রয়েছে যেগুলো না মানলে কুরবানি হবে না। কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা থেকে প্রমাণিত যে কুরবানির জন্য প্রয়োজন ইখলাস তথা একনিষ্ঠাতা থাকতে হবে। কুরবানি হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।কোরবানির সময় নিয়তে যদি পরিশুদ্ধতা না থাকে তাহলে কোরবানি কবুল হবে না।

কারণ কুরবানির ইতিহাসে দুনিয়ায় প্রথম যখন কোরবানি হয় তখন হাবিল ও কাবিল এর মধ্যে অনুষ্ঠিত কুরবানি হয়েছিল এতে কাবিলের কুরবানি কবুল হয় না হওয়ার কারণে হাবিল বলেছিল আল্লাহ তাআলা মুত্তাক্বিদের কুরবানী কবুল করে থাকেন। আল্লাহর কাছে কখনো কুরবানির গোস্ত পৌঁছায় না, রক্ত পৌঁছায় না বরং তার কাছে পৌঁছায় তো তাদের তাকওয়া,তাই কোরবানির নিয়ম হচ্ছে মন থেকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানির নিয়ত করা।

আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে যা ইসলামের শরীয়তে নির্ধারিত করে দিয়েছে যেমন গরু,ছাগল, মহিষ, উট, ভেড়া ও দুম্বা।কুরবানীর পশু জবাই করার সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা অতি জরুরি। তবে পশু জবের বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম বিসমিল্লাহ বলে জবাই শুরু করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করার জন্য ছুরি চালানো শুরু করা।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবাই করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা। কুরবানি হোক শুধু মাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও রাজি খুশির উদ্দেশ্যে। যথাযথ শর্ত ও নিয়ম মেনে কুরবানী করার তৌফিক দান করুক সবাইকে আমিন।

কুরবানীর গরু জবাই করার দোয়া

আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য কুরবানী পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানের পর দোয়া পড়তে হয়।কুরবানির গরু জবাই করার দোয়া অনেকেই জানেনা। তাই এই আর্টিকেল আপনাদেরকে জানাবো কুরবানীর গরু জবাই করার দোয়া।আপনি চাইলে শুধু বিসমিল্লাহ বলে গরু জবাই করতে পারেন এতে কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে কুরবানির সময় নির্দিষ্ট কিছু দোয়া রয়েছে যেটা করলে আপনার জন্য উত্তম হবে।

কোরবানির গরু জবাই করার দোয়াটি হলো

বাংলা উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াঝঝহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আন মিনাল মুশরিকিন।ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায় ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা। বলে কুরবানির শুরু করা বেশি উত্তম। আশা করি সবাই কুরবানীর গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

লেখক এর শেষ কথা

কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া সমৃদ্ধ ইবাদত। এটি আল্লাহ তালার নামে পশু জবেহ করার মাধ্যমে আদায় করতে হয়।এতক্ষণ আর্টিকেলটি পরে কুরবানীর ইতিহাস, কুরবানি কাদের উপর ফরজ ও কুরবানির নিয়ম এবং কুরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। যাতে তারাও কুরবানীর ইতিহাস এবং কুরবানী কাদের উপর ফরজ সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।কুরবানির ইতিহাস সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন । এতক্ষণ আটিকালি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url