শবে কদরের রাত চেনার উপায় ও শবে কদরের নামাজের দোয়া ও ফজিলত
ফরজ গোসলের নিয়ম জানুন
রমজান মাসের মধ্যে রয়েছে রহমত, ক্ষমা ও বরকতে পরিপূর্ণ। তবে এ মাসে রয়েছে বিশেষ
একটি রাত যেটাকে আমরা শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদরের রাত বলে থাকি।আজকে এই
আর্টিকেল আপনাদেরকে জানাবো বিশেষ এই শবে কদরের রাত চেনার উপায় এবং শবে কদরের
নামাজ কত রাকাত এ সম্পর্কে।
শবে কদরের রাত হচ্ছে হাজার বছরের চেয়েও উত্তম একটি রাত। এই সবে কদরের রাতে
বিশ্বের সকল মুসলমান ভাই-বোন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদত এবং ফজিলতের জন্য
পালন করে।তবে বর্তমানে অনেকেই জানে না শবে কদরের রাত চেনার উপায় সম্পর্কে।শবে
কদরের রাত চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ শবে কদরের রাত চেনার উপায়
ভূমিকা
পবিত্র রমজান মাস একটি বরকত ও রহমতের মাঠ এই পবিত্র রমজান মাসে একটি রাতকে মহান
আল্লাহতালা অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন করেছেন। যে রাতকে আমরা সবাই লাইলাতুল কদর বা
শবে কদরের রাত বলে থাকি।এই শবে কদরের রাতে সকল মুসলমান ভাই-বোনেরা ধর্মপ্রাণ
মুসলমানগণ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটিয়ে দেয় সারারাত।
তবে অনেকেই শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ত, শবে কদরের রাত
চেনার উপায়, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের ফজিলত, শবে কদরের নামাজ নফল না
সুন্নত সেই সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। তাই সকলের সুবিধার্থে শবে কদরের রাত চেনার
উপায় সহ শবে কদরের সকল তথ্য সম্পর্কে জানাবো।
শবে কদরের রাত চেনার উপায়
প্রতিবছর আমাদের মাঝে পবিত্র রমজান মাস আসে তবে পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের
রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত রাত যে রাতকে আমরা সকলেই লাইলাতুল কদর বা শবে
কদরের রাত বলে থাকি। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও বেশি উত্তম একটি রাত।কোন
ব্যক্তি সঠিক ভাবে বলতে পারবে না শবে কদরের রাত কবে বা কোন দিনে।
রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন শবে কদরের রাত হতে পারে।তবে হাদীস
শরীফে শবে কদরের রাত চেনার জন্য কিছু চিহ্নিত আলামতের কথা বলা হয়েছে।চলুন জেনে
নেওয়া যাক শবে কদরের রাত চেনার উপায় সম্পর্কে কিছু আলামত।
প্রথম নাম্বার আলামত: এক হাদীসে বলা হয়েছে শবে কদরের রাতের শেষে সকালের
সূর্য উদিত হবে খুব উজ্জ্বলতা দেখতে হবে। তবে সূর্যো উদায়ের সময় তার কোন তীব্র
আলোকরশ্মি থাকবে না। ( মানে দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)
দ্বিতীয় নাম্বার আলামত: দ্বিতীয় নাম্বার আলামতে বলা হয়েছে শবে কদরের
রাতটি হবে প্রফুল্লময়।না গরম লাগবে না ঠান্ডা লাগবে। সেদিন সূর্য উঠবে লাল
বর্ণের তবে দুর্বল থাকে।
তৃতীয় নাম্বার আলামত: শবে কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রজনীতে রয়েছে।
যে ব্যক্তি এই রাতে নিজের পাপ-পুণ্যের হিসেব নিতে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে
আল্লাহতালা তার পূর্বের এবং পরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন ইনশাল্লাহ।শবে কদরের রাতের
চাঁদ হবে উজ্জ্বল এবং আবহাওয়া হবে প্রশান্তির।
চতুর্থ নাম্বার আলামত: এই শবে কদরের রাত হবে বিজোর রাত গুলোর মধ্যে একদিন।
যেমন ২১ তম রমজান, ২৩ তম রমজান, ২৫ তম রমজান, ২৭ তম রমজান, ২৯ তম রমজান।তবে শবে
কদরের রাত ২৭ তম রমজানে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ধারণা করা হয়।
পঞ্চম নাম্বার আলামত: শবে কদরের রাতের না গরম থাকবে না না ঠান্ডা থাকবে
সেই রাতে কোন উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।
ষষ্ঠ নাম্বার আলামত: অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে শবে কদরের রাত হয়ে রয়েছে
সপ্তম, নবম অথবা বিংশ যে রাতে নুড়ি পাথরের চেয়েও বেশি সংখ্যক ফেরেশতার জমিনে
আসবে। সুবাহানাল্লাহ!
সপ্তম নম্বর আলামত: যদি কোন ঈমানদার ব্যক্তি থাকে তাহলে কোন ঈমানদার
ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নে হয়তো জানিয়ে দিতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোর রাত গুলোর মধ্যে
লাইলাতুল কদরের রাত খোঁজ করো।গুরুত্বপূর্ণ এই শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদরের
ফজিলত কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।আশা করি উপরের উল্লেখিত আলামত গুলো পড়ে শবে
কদরের রাত চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
বর্তমানে অনেক মুসলমান ভাই বোন গুগলে সার্চ করে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের নামাজ
কত রাকাত।তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ভাবে কোনো হাদিসে শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
সে সম্পর্কে বলা হয়নি।তবে কিছু কিছু হাদিসে বলা হয়েছে ন্যূনতম ৮ রাকাত থেকে
শুরু করে উপরে আপনি যত বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন ততই সওয়াব লাভ করতে
পারবেন।
আরো পড়ুনঃ চোখ উঠলে কি দোয়া পরতে হয়
আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যত বেশি নফল নামাজ আদায় করবেন আপনার জন্য ভালো আপনি
চাইলে সারারাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।সাথে কোরআন ও হাদিসের আলোকে জিকির বেশি
বেশি করতে পারেন।এই শবে কদরের রাত হচ্ছে নিজের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছের ক্ষমা
প্রার্থনা করা।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম
শবে কদরের নামাজের নিয়ম নিয়ে অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে শবে কদরের নামাজ
কিভাবে পড়বো।শবে কদরের নামাজের নিয়ম হল দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে
হবে।মনোযোগ সহকারে নিজের মনটাকে শান্ত করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য
সঠিকভাবে নামাজ পড়তে হবে।শবে কদরের নামাজের নিয়ম বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল।
- সর্বপ্রথম নামাজের উদ্দেশ্যে কেবলামুখী হয়ে সঠিকভাবে দাঁড়াতে হবে।
- তারপর শবে কদরের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। আপনি চাইলে বাংলায় অথবা আরবিতে যেইভাবে সম্ভব নিয়ত করতে পারেন।
- নফল নামাজের নিয়ত করা হয়ে গেলে আল্লাহু আকবার বলে সানা পাঠ করতে হবে এবং সূরা ফাতেহার সাথে যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
- সাধারণ নামাজের মত সুরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ে রুকু এবং সেজদা দিতে হবে।
- প্রথম রাকাত নামাজ শেষ করে দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করে তাশাহুদ দুরুদ শরীফ এবং মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরাতে হবে।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আরও কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে
জানাবেন। আশা করি সবাই শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে
পেরেছেন।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায়
নিয়ত কথাটি হচ্ছে আরবি শব্দ। এর মূল অর্থ হলো মনের ইচ্ছা, সংকল্প বা মনের
প্রতিজ্ঞাকে বুঝায়। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যেকোনো কাজ শুরুর আগে মনের
মধ্যে ইচ্ছাপোষণ করাকেই নিয়ত বলে।আপনি চাইলে শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবিতে
অথবা বাংলায় যেভাবে আপনার সুবিধা হয় সেভাবে আপনি নিয়ত করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথা কমানোর দোয়া
শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায় হল: হে আল্লাহ আমি কেবলামুখী হয়ে আপনাকে
রাজি খুশি এবং সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত শবে কদরের নফল নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত
করছি। 'আল্লাহু আকবার'
এতক্ষণে শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে এবার
চলুন জেনে নেওয়া যাক শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে।
শবে কদরের ফজিলত
পবিত্র রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস।এর জন্য রমজান মাসকে সকল মাসের থেকেও উত্তম
মাস বলে।শবে কদরের ফজিলত আদায় করার জন্য প্রকৃত মুসলমান সারাবছর অপেক্ষা করে শবে
কদরের জন্য।শবে কদরের রাতে আমল করার ফলে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ভাগ্য
পরিবর্তন করে।
শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহ তাআলা মক্কার হেরা গুহায় ফেরেশতাদের সরদার হযরত
জিবরাইল আঃ মাধ্যমে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতি পবিত্র মহাগ্রন্থ আল
কোরআন অবতীর্ণ হয়।আল্লাহ তাআলা আরো বলেন ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় যে কদরের
রাতে নফল সালাত আদায় করবে ও রাত জেগে ইবাদত বন্দেগীতে থাকবে আল্লাহ তা'আলা তার
যাবতীয় সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
হাজার হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ইবাদত কবুল শবে কদরের রাতে। যারা মুমিন বান্দা
তাদের জন্য লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মঙ্গলময় এবং বরকতময় রাত। শবে কদরের রাতে নিজের
মনের যত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা আছে আল্লাহর কাছে তা সঠিকভাবে চাইতে পারলে আল্লাহ তাআলা
তার মনের সকল ইচ্ছা পূরণ করে দিবে। এর থেকে সুবর্ণ সুযোগ বড় আর কি হতে পারে।
এই সবে কদরের রাত যে ব্যক্তি ইবাদত করতে পারবে না সত্যিই তার থেকে বড় হতভাগা আর
কেউ নেই। তাই চেষ্টা করবেন শবে কদরের রাতে আল্লাহর কাছ থেকে ফজিলত গুলো ঠিকভাবে
চেয়ে নেওয়ার জন্য। আল্লাহ যাতে সকল মুসলমান ভাই বোনদেরকে শবে কদরের রাতে ইবাদত
করার তৌফিক দান করেন। আমিন
আশা করি এতক্ষণে শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছিন।সবাই চেষ্টা করবেন
রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোর দিন গুলোতে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য।
শবে কদরের আমল সমূহ
সকল মুসলমানদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যেভাবে রাত
কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করা।অনেকেই মনে করে সবার কপালে রাতে শুধু নফল নামাজ
পড়লেই হবে।তবে নফল নামাজের পাশাপাশি আরো কিছু আমল সমূহ রয়েছে যেগুলো আদায় করা
আমাদের জন্য জরুরী।কারণ শবে কদরের আমল সমূহ গুলো জানা থাকলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা,
প্রার্থনা, মনের ইচ্ছাগুলো ভালোমতো চাইতে পারবো।চলুন জেনে নেওয়া যাক শবে কদরের
আমল সমূহ গুলো।
- প্রথমে নামাজের আগে মেসওয়াক করে নিতে হবে। যাতে মুখের ভিতরে দুর্গন্ধ না থাকে।
- পরে এশার নামাজ পড়া হলে তারাবির নামাজ সম্পূর্ণ করে শবে কদরের উদ্দেশ্য করে নফল নামাজ আদায় করতে হবে।
- নফল নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ ও সালাতুল তাজবি নামাজ আদায় করতে পারেন।
- নামাজের মধ্যে যখন সিজদা দিবেন সিজদার মধ্যে তাসবিহ পাঠ করা শেষ হলে সিজদায় থাকা অবস্থায় দোয়া করবেন। কারণ সেজদা থাকা অবস্থায় মানুষ আল্লাহর অতি নিকটে চলে যায় ফলে তখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- শবে কদরের রাতে মাঝে মাঝে বসে জিকির,আসকার ও তসবিহ পাঠ করতে হবে। যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু আকবার,আস্তাগফিরুল্লাহ সহ আরো যে সকল তাসবিহ আছে সেগুলো বেশি বেশি আদায় করতে পারেন।
- যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন তারা অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম।
- দোয়া কবুলের প্রত্যাশা নিয়ে নিজের পরিবার সহ সকল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, দেশবাসী সকলের জন্য শান্তি কামনা করা।
শবে কদরের রাত অনেক ফজিলতের রাত। তাই সকলের চেষ্টা করবেন শবে কদরের রাতে বেশি
বেশি আমল করার জন্য।আশা করি সবাই ভালোমতো শবে কদরের আমল সমূহ গুলো জানতে পেরেছেন।
শবে কদরের আমল সমূহ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
লেখক এর মন্তব্য
শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে মুসলমানদের জন্য বছরের শ্রেষ্ঠ একটি
রাত।তাই সকলের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলের শবে কদরের রাত চেনার উপায়, শবে কদরের
নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায়, শবে
কদরের ফজিলত এবং শবে কদরের আমল সমূহ গুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্টিকেলটি যদি
আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারা শবে
কদরের রাত চেনার উপায় গুলো জানতে পারে।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url