বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় ও কিসের গন্ধে ইঁদুর পালায় জানুন
কোন কোন মাছের আঁশ আছে জানুন
ইঁদুরের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া অনেক দুষ্কর। নতুন,
পুরাতন, মূল্যবান, প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুলো নষ্ট করে দেয় ইঁদুর।তাই আজকে
আপনাদেরকে জানাবো বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়, কিসের গন্ধে ইঁদুর পালায় এবং
ইঁদুরের খাওয়া খাবার খেলে কি হয়।
ইঁদুর সাধারণত বাড়ির স্টোর রুমে, রান্নাঘরে, আলমারিতে সহ বিভিন্ন ফার্নিচার এর
মধ্যে বাসা বেধে থাকে। আমাদের জামাকাপড় থেকে শুরু করে ফার্নিচার, খাবারের
প্যাকেট,দরকারি কাগজপত্র সহ অন্যান্য দামি জিনিস সবকিছুই নষ্ট করে দেয়।ইঁদুরের
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে জানতে হবে বাড়ি থেকে ইদুর তাড়ানোর
উপায় এবং কিসের গন্ধ ইঁদুর পালায়।
সূচিপত্রঃ বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়
ভূমিকা
ইঁদুর যেরকম ভাবে আমাদের ঘরের সর্বনাশ করে তেমনি সাথে সাথে কিছু ভয়ংকর রোগ
ছড়িয়ে দেয়। কারণ ইঁদুরের মুখ দেওয়া খাবার অথবা আমাদের খাবারের মধ্যে ইঁদুরের
মল পড়ে থাকা অবস্থায় যদি আমরা খাবারটা খাই তাহলে অনেক ভয়ংকর রোগের সংক্রমণ হতে
পারে।
এ সকল রোগের সম্মুখীন না হতে চাইলে এবং ইঁদুরের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চাইলে
অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে ইঁদুরের বৈশিষ্ট্য, ইঁদুরের জীবন চক্র, ইঁদুরের বাসস্থান
কেমন, বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়, ইঁদুরের প্রিয় খাবার কি, ইদুর কত দিন
বাঁচে, ইঁদুরের খাওয়া খাবার খেলে কি হয় সহ ইঁদুর সম্পর্কে সকল অজানা তথ্য জানতে
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ইঁদুরের জীবন চক্র
ইঁদুরের জীবন চক্র খুবই অদ্ভুত। এরা যে কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে তাল মিলিয়ে
চলতে পারে। গবেষণার দেখা গেছে প্রায় ১৬০০ থেকে ১৭০০ প্রজাতির ইঁদুর থাকলেও এ
পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৮ টি প্রজাতির ইঁদুর দেখা যায়। ইঁদুর প্রতি বছরে ৬ থেকে
৮ বার বাচ্চা দিয়ে থাকে।
প্রতিবারে চার থেকে দশটি বাচ্চা পর্যন্ত দিতে পারে। ইঁদুর বাচ্চা দেওয়ার দুই
দিনের মাথায় এরা আবারও গর্ভধারণ করতে পারে। ইঁদুরের গর্ভধারণের সময় ১৮ থেকে ২২
দিন। ইঁদুরের বাচ্চা তিন মাস পরে প্রজননের সক্ষম হয়ে ওঠে। বাইরের পরিবেশ ও ঘরের
পরিবেশে মিলে সর্বমোট এক থেকে দেড় বছর একটি একটি ইঁদুর বাঁচে।
ইঁদুরের বৈশিষ্ট্য
আমাদের রান্নাঘরে বা স্টোর রুমে যে সকল ইঁদুর দেখা যায় সেগুলোকে ঘর নেঙটি ইঁদুর
বলে।ইঁদুর সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয় একটি হচ্ছে মাঠে বসবাসকারী ইঁদুর এবং
অন্যটি হচ্ছে বাসা বাড়িতে বসবাসকারী ইঁদুর । এ সকল ইঁদুরের বৈশিষ্ট্য হলোঃ
- ইঁদুরের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়।
- ইঁদুর খুব দ্রুত চলাচল করে
- ইঁদুরের পা চারটা।
- ইঁদুর মাটিতে গর্ত করে থাকে
- ইঁদুর জমির ফসল নষ্ট করে
- ঘরবাড়ি আসবা পত্র কাপড়-চোপড় কেটে নষ্ট করে।
- এরা সাধারণত ১০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়।
- এদের শরীরের রং কালো বা বাদামি হয়।
- তবে জাত ভেদে অনেক ধরনের কালারের ইঁদুর হয়ে থাকে।
- এদের শরীরের লোম ছোট ছোট হয়।
- ইঁদুরের লেজের দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে দশ সেন্টিমিটার হয়।
ইঁদুরের জীবন চক্র এবং ইঁদুরের বৈশিষ্ট্য জানা হয়ে গেলে এবার আমরা জানবো ইদুরের
বাসস্থান কেমন হয় এবং বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে। আশা করি উপরে
উল্লেখিত সকল তথ্যগুলো ভালোভাবে জানতে পেরেছো।
ইঁদুরের বাসস্থান কেমন
ইঁদুরের বাসস্থান মূলত হয় মাটিতে। ইদুর মাটিতে গর্ত করে ঘর বানিয়ে থাকতে পছন্দ
করে। গ্রাম শহর সকল জায়গায় দেখা যায়। ইঁদুরের বসবাসস্থান গুলো হচ্ছে রাস্তাঘাট
এর ড্রেন, সেচের নালা, হাঁস মুরগির খামার, বনাঞ্চল,কৃষি জমিতে ইত্যাদি। সব ময়লা
জায়গাগুলাতে বেশিরভাগ সময় ইঁদুরের বাসস্থান।
সুতরাং যেখানে মানুষের বসবাস সেখানেই ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের
অনেকটা জুড়েই ইঁদুরের দেখা মিলে।কৃষি জমির ফসল গুদামজাত যেখানে করা হয়।সব থেকে
বেশি সেইখানে ইঁদুরের বাসস্থান দেখা যায়। জমির ফসল নষ্ট করার পাশাপাশি গুদামজাত
করা ফসলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। ইঁদুরের দ্বারা মাঠের ফসলের সবচাইতে বেশি
ক্ষতি হয়।
এছাড়া গরু-ছাগলের গোয়াল ঘরে অথবা হাঁস মুরগির খামারেও ইঁদুরের বাসস্থান
অনেক।ইঁদুরের যন্ত্রণায় খামার করে শান্তি নেই কারন ইঁদুরের মল থেকে নানারকম
রোগবালায় পশু পাখির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আশাকরি ইঁদুরের বাসস্থান কেমন হতে পারে
জানতে পেরেছেন। এখন থেকে নিয়মিত এই সকল জায়গায় খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখবেন
যাতে ইঁদুরের বাসস্থান তৈরি না করতে পারে।
বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়
বাড়িতে ইঁদুর থাকলেই দিন দিন সব কিছু তছনছ করে দিবে সাথে রোগ বালাই ছড়িয়ে
দিবে।এতে আপনার বাড়ির জিনিসপত্রই দিন দিন নষ্ট হবে সাথে আপনার জীবনের ঝুঁকিও
থাকবে।তাই আমাদের সকলেরই বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।
চুলঃ আমাদের মাথার চুল বেশ কার্যকর করে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য।কারন আমাদের
চুল যদি ইঁদুরের পায়ে জড়িয়ে পড়ে অথবা ইঁদুরের মুখে চলে যায় তাহলে ইঁদুরের
মৃত্যু নিশ্চিত। তাই বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য আমরা সারাদিন মাথায় চিরুনি
দিয়ে চুল আঁচানোর পরে যে পরিমাণ চুল লেগে থাকে চিরুনিতে সেগুলো ঘরের মেঝেতে কিছু
পরিমাণ চুল ফেলে রাখতে হবে এবং ইঁদুরের যে সকল জায়গা গুলো পছন্দের সেইখানে কিছু
পরিমাণ চুল ফেলে রাখতে হবে।
বিড়ালঃ আপনি চাইলে বাড়িতে বিড়াল পুষতে পারেন কারণ বিড়াল থাকতে বাড়িতে
ইঁদুর থাকে না। ইঁদুর বিড়ালকে অনেকটাই ভয় পায় এবং যে সকল ইঁদুর থাকে সেগুলোকে
বিড়াল মেরে ফেলে।
গরুর গোবরঃ বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য এবং ইঁদুর মারার জন্য শুকনো
গরুর গোবর অনেক কার্যকরী। কারণ একবার যদি শুকনো গোবর ইঁদুরের মুখে চলে যায় তাহলে
ইঁদুর নিশ্চিত মারা যাবে।
কাঁচা পেঁয়াজঃ বাড়ির পাশে অথবা বাড়ির ভিতরে যে সকল জায়গায় ইঁদুর গর্ত
করে বাসা বেধেছে সেই গর্তের মুখে কাঁচা পেঁয়াজ কেটে গর্তের সামনে রেখে দিলে ইঁদুর
পালিয়ে যাবে।
রসুনের স্প্রেঃ প্রথমে কিছু পরিমাণ রসুনের কুয়া নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে
রাখুন। তারপর যেখান দিয়েই ইঁদুর যাতায়াত করে বা যেখানে ইঁদুরের ঘর রয়েছে
সেখানে সেই রসুন ভেজানো পানিটা স্প্রে করে দিন। দেখবেন ইঁদুরের উৎপাত কমে যাবে।
ইঁদুর মারার বিষঃ বর্তমানে বাজারে নানান রকমের ইঁদুর মারার বিষ পাওয়া
যায়।আপনি চাইলে সেই সকল বিষ বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসার পর ইঁদুরের গর্তের সামনে
বা ঘরের মেঝের চারদিকে কিছু পরিমাণ করে ইঁদুর মারার পাউডার দিয়ে রাখতে পারেন।
লবঙ্গঃ ইঁদুর তাড়ানোর জন্য লবঙ্গ খুবই কার্যকরী কারণ লবঙ্গের গন্ধ ইঁদুর
সহ্য করতে পারেনা ।শুকনো কাপড়ে কিছু পরিমাণ লবঙ্গ বেঁধে তারপর ঘরের কোনায়
কোনায় রেখে দিন অথবা ইঁদুরের গর্তে সামনে রেখে দিলে ইঁদুর যন্ত্রণা অনেকটাই কমে
যাবে।
শুকনো মরিচের গুঁড়াঃ বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম
হলো শুকনো মরিচের গুঁড়া। বাড়িতে যদি ইঁদুরের বাসা খুঁজে পান তাহলে অবশ্যই
ইঁদুরের গর্তের সামনে কিছু পরিমাণ শুকনা মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দিয়ে রাখবেন।এটাই
ইঁদুরের যন্ত্রণা কমে যাবে।
ব্রেকিং পাউডারঃ ব্রেকিং পাউডারের গন্ধ হয় ইদুর সহ্য করতে পারে না ।ঘরের
কোনায় কোনায় ব্রেকিং পাউডার গুলো ছড়িয়ে রাখুন।দেখবেন বাড়ি থেকে ইঁদুর
পালিয়ে গেছে।
বাড়িতে যদি ইঁদুর মারার বিষ দিয়ে থাকেন এবং ব্রেকিং পাউডার দিয়ে থাকেন। তাহলে
প্রতিদিন সকালে ঝাড়ু দিয়ে বাইরে ফেলে দিবে।কারণ এই সকল পাউডার হচ্ছে বিষাক্ত
পাউডার যদি এ সকল পাউডার আপনার মুখের ভিতরে অথবা অন্য কারোর মুখে চলে যায় তাহলে
হিতে বিপরীত হতে পারে। আশা করি বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পেরেছি। বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় জানা হলে এবার চলুন
জেনে নেই কিসের গন্ধ ইঁদুর পালায়
কিসের গন্ধে ইঁদুর পালায়
আমাদের অনেকের ঘরেই ইঁদুরের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। বর্তমানে এমন কোন বাড়ি
খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল যে বাড়িতেই ইঁদুর নাই। তবে কিছু জিনিসের গন্ধের
সাহায্যে ইঁদুর আপনার বাড়ি থেকে চিরতরে পালিয়ে যাবে।যে সকল গন্ধে ইঁদুর পালায়
যথা
- শুকনো গোবর
- গোল মরিচের গুঁড়া
- কাঁচা পিঁয়াজ
- মাথার চুল
- পুদিনার তেল অথবা পুদিনা পাতা
- বেকিং পাউডার
- পেপারমিন্ট
- লবঙ্গ
- পাকা কলার গন্ধ
এ সকল উপাদানের গন্ধ ইঁদুর একেবারেই সহ্য করতে পারে না এই সকল গন্ধ পেলে ইঁদুরের
হার্ট দুর্বল হয়ে যায় এবং ইঁদুর অসুস্থ হয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।
ইঁদুর কতদিন বাঁচে
ইঁদুর সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানা হলো এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ইঁদুর কত দিন
বাঁচে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে একটি সুস্থ ইঁদুর সাধারণত ১ বছর এর
মত বাঁচে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতি যত্ন সহকারে ইঁদুর পালা হলে অথবা ইঁদুর যদি
অনেক যত্ন সহকারে থাকে তাহলে এক বছর থেকে কিছুদিন বেশি বেঁচে থাকে।
মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুগণ ইঁদুর সম্পর্কে আশা করি সকল তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। ইঁদুর
যেরকম আমাদের বাড়ির সব জিনিসপত্র নষ্ট করে তেমনি আমাদের শরীরে অনেক রোগ বালাই
আনতে পারে। তাই আমাদের সকলেরই বাড়ি থেকে ঈদুল আড়ানোর উপায়,কিসের গন্ধে ইঁদুর
পালায়, ইঁদুরের বাসস্থান কেমন এ সকল বিষয়ে অবশ্যই সঠিকভাবে জেনে রাখা উচিত।
তবে খেয়াল রাখবেনা ইঁদুর তাড়ানোর উপায় খুঁজতে যেয়ে নিজের যাতে কোন প্রকার
ক্ষতি না হয়। কারণ ইঁদুর তাড়ানোর জন্য যে সকল বিষ অথবা যে সকল খাবার আপনি
ব্যবহার করবেন সেগুলো অবশ্যই সাবধানে রাখবেন।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url