চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ উঠার লক্ষণ

মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ ওঠার লক্ষণ।বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ উঠার লক্ষণ
বর্তমানে চোখ উঠা খুব পরিচিত একটি সমস্যা।শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং বৃদ্ধ সকলেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তারি ভাষায় একে কনজাংটিভাইটিস বলা হয়।
সূচিপত্রঃ চোখ উঠলে করণীয় কি

ভূমিকা

যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে একজন আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের চোখেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে তাই আমাদের সকলেরই চোখ উঠা রোগটি থেকে সচেতন থাকা উচিত এবং চোখ উঠলে করণীয় কি, চোখ উঠার লক্ষণ,চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না,চোখ উঠলে কি দোয়া পরতে হয় ও চোখ উঠার লক্ষণ জানা উচিত।

চোখ উঠার লক্ষণ

চোখ উঠলে সাধারণত দুই চোখ আক্রান্ত হয়। চোখ উঠার প্রধান লক্ষণ হলো চোখের সাদা অংশ লাল অথবা গোলাপি রঙের হয়ে যাওয়া।ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ উঠা রোগ হয়।আবার কখনো কখনো এলার্জির কারণেও এ রোগে হয়।যে মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে সে সময়ে এই রোগটি বেশি হয়।আরো কিছু চোখ উঠার লক্ষণ রয়েছে যেমন
  • চোখের পাতা ফুলে যাওয়া।
  • চোখ চুলকানো বা জ্বালাপোড়া করা।
  • চোখের সাদা অংশের উপরের পর্দা ফুলে যাওয়া।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া।
  • চোখের মধ্যে কিছু একটা ঢুকেছে এমন মনে হওয়া।
  • চোখে মিউকাস জাতীয় তরল অথবা পুজ জমা।
  • পুঁজ শুকিয়ে চোখের পাতায় সাময়িক সময়ের জন্য জোড়া লেগে যেতে পারে।

চোখ উঠার কারণ

সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু দিয়ে ইনফেকশন হলে চোখ উঠে।এর মধ্যে কিছু ছোয়াচে ভাইরাস আছে যেগুলো একজন থেকে আরেকজনের কাছে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে।ভাইরাসজনিত চোখ উঠলে প্রথমে এক চোখে আক্রান্ত হয় কয়েক দিনের মধ্যে ওপর চোখ আক্রান্ত হয়।
মাঝে মাঝে এলার্জির কারণে ও চোখ উঠে।সর্দি ও চুলকানির পাশাপাশি চোখ উঠার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।তবে এলার্জির কারণে যখন চোখ ওঠে সেটা ছোঁয়াচে নয়।এলার্জির কারণে চোখ উঠলে চোখে প্রচুর পরিমাণে চুলকানি হতে পারে সেইসাথে পানি পড়া ও চোখ ফুলে যাওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।দুই চোখ একসাথেই আক্রান্ত হয়।

চোখ উঠলে করণীয় কি বা চোখ উঠলে ঘরোয়া উপায়

চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে,টিস্যু, রুমাল, চশমা,বালিশ যদি কোন সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করে তাহলে সে আক্রান্ত হতে পারে।তাই চোখ উঠলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।যে ব্যক্তি চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত তাকে একটি পরিষ্কার তুলা বা নরম সুতি কাপড় গরম পানিতে ডুবিয়ে আলতো করে সেই কাপড়টি বা তুলাটি চোখের পাতা ও পাপড়ি পরিষ্কার করতে হবে।
দিনে কয়েকবার এটি করতে হবে। কাপড় বা তুলার সাহায্যে গরম সেঁক দিতে হবে।চোখ বেশি ব্যথা করলে চোখের উপরে কাপড়ের সাথে কিছু বরফ নিয়ে চোখের উপর রাখতে হবে।এ সময় চোখের উপরে চাপ পড়ে এমন কোন কাজ করা যাবে না।যেমন মোবাইল টিপা,টিভি দেখা,কম্পিউটার টিপা।এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না

আপনারা কি জানেন চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না।
অধিকাংশ মানুষই হয়তো জানে না।চোখ উঠলে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না যেমন
  • ইলিশ মাছ
  • চিংড়ি মাছ
  • পুঁইশাক
  • মসুরের ডাল
  • অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার
  • তেলে ভাজা খাবার
  • প্রসেসড মিট
  • মার্জারিন
  • ক্যান ফুড ইত্যাদি।
এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তা না হলে চোখে চুলকানি বা ব্যথার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে

এতক্ষণ আমরা জানলাম চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না
কিন্তু এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে । আসলে চোখ উঠলে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার ছাড়া সব খাবারই খাওয়া যেতে পারে।তার মধ্যে বিশেষ কিছু উপকারি খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হল
  • কিসমিস
  • মধু
  • আমলকি
  • বিট লবণ
  • ঘি
এসব খাবার চোখ উঠা রোগ থেকে মুক্তি পেতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।খাবার তালিকায় এসব খাবারগুলো রাখার চেষ্টা করুন।

চোখ উঠলে সর্বোচ্চ কতদিন থাকে

চোখ ওঠার রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।চোখ উঠলে সর্বোচ্চ সাত থেকে দশ দিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়ে যায়।তবে কারো কারো ক্ষেত্রে চোখ ওঠার রোগ থেকে মুক্তি পেতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

চোখ উঠলে কোন ড্রপ ব্যবহার করতে হবে

চোখ উঠলে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যায়।যদি ১০ দিনের বেশি হয়ে যায় এবং জ্বালাপোড়া না কমেতাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিছু ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।চক্ষু ডাক্তারের পরামর্শ  ছাড়া কোনো প্রকার ড্রপ ব্যবহার করবেন না।কারণ চোখ আমাদের অতি মূল্যবান।

চোখ উঠলে কি দোয়া পরতে হয়

মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ।তার মধ্যে বিশেষ একটি হলো চোখ।চোখে বিভিন্ন কারণে ব্যথা ও রোগে আক্রান্ত হতে পারে তাই সব সময় চোখের যত্ন নেয়া জরুরি।কোন কারনে চোখে ব্যথা অনুভব হলে কুরআনুল কারীমে একটি আয়াত রয়েছে যার মাধ্যমে চোখ ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি,আল্লাহুম্মা আফিনি সামই, আল্লাহুম্মা আফিনি বাসারি লা ইল্লাহা ইল্লা আনতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে।হে আল্লাহ  আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে।আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই।

মানবজাতির শারীরিক অসুস্থতা থেকে সুস্থতার জন্য বিভিন্ন দোয়া দুরুদ রয়েছে।সবগুলো দোয়া থেকে এই দোয়াটি অনেক ফজিলত পূর্ণ।

চোখ ওঠার উপকারিতা

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাঃ প্রাথমিক সুবিধা গুলির মধ্যে একটি হলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ভূমিকা পালন করে।অ্যালার্জেন বা সংক্রামক এজেন্টের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ চোখের সংস্পর্শে আসে, তখন এই প্রতিরক্ষা শরীরকে আক্রমণকারীদের নির্মূল করতে সাহায্য করে।

টক্সিন ফ্লাসঃ চোখ উঠা চোখের জল থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং বিরক্ত কর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।চোখের জলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।চোখের জলে অ্যান্টিবডি ও এনজাইম রয়েছে যা ক্ষতিকারক পদার্থকে নিরপেক্ষ করতে পারে।

তৈলাক্তকরণ সুরক্ষাঃ চোখ ওঠার সময় বর্ধিত টিয়ার বা চোখের পানি লুব্রিকেটেড রাখতে সাহায্য করে।শুষ্কতা প্রতিরোধ এবং সুরক্ষামূলক স্তর প্রদান করে যা চোখকে বাহিক উপাদান থেকে রক্ষা করে।

পরিশেষ কথা

বেশিরভাগ মানুষ চোখ উঠা প্রায়ই অসুবিধা হিসেবে দেখে।তবে খালি অসুবিধা দেখলেই হবে না চোখ উঠার উপকারিতা ও আছে। এটি একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে এর সুবিধা গুলি বোঝা এবং চোখ সুরক্ষিত রাখতে এর ভূমিকা একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে।

আপনি যদি চোখ উঠার লক্ষণ গুলি অনুভব করেন তবে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য পেশাদার চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ উঠার লক্ষণ এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url