ওজন কমানোর উপায় কি ও ওজন কমানোর খাবার
ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়
আজকে আমরা ওজন কমানোর উপায় কি এবং ওজন কমানোর খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত
জানবো।সুস্থ সুন্দর রোগমুক্ত জীবন আমরা সবাই চাই আর সুস্থ থাকার সবচেয়ে প্রধান
উপায় হলো শরীরের ওজন বজায় রাখা।কারণ ওজন বেড়ে গেলে যেকোনো রোগের ঝুঁকি অনেকটাই
বেড়ে যায়।শুধু তাই নয় বাড়তি ওজন অনেকেরই মানসিকভাবে অসস্তিতে রাখে।
ওজন কমানো আসলে খুব কঠিন কাজ নয়। একটু ইচ্ছে আর সামান্য ধৈর্য থাকলেই তা
সম্ভব।প্রত্যেকটি ব্যক্তি ফিট হতে চায় এবং নিজেকে স্লিম দেখতে চায়।কিন্তু ওজন
কমানোর উপায় কি সে সম্পর্কে অনেকেই জানেনা।তাই এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাবো
ওজন কমানোর উপায়।
সূচিপত্রঃ ওজন কমানোর উপায় কি ও ওজন কমানোর খাবার
ভূমিকা
সব সময়ের জন্য ওজন কম রাখতে হলে জীবন ধারায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আনতে
হবে।খাবার ও দৈনিক শ্রমের ব্যাপারে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।অল্প সময়ে
বেশি ওজন কমানোর দরকার নেই।প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে একটি পরিবর্তন অভ্যাস
করুন।এবং তা আপনার জীবনের সাথে মানে নিতে চেষ্টা করুন।
আরো জানুনঃ দ্রুত লম্বা হওয়ার উপায় বিস্তারিত জানুন
মনে রাখবেন ওজন কমাতে হয় ধীরে ধীরে। আপনার ওজন একদিনেই বাড়েনি।সুতরাং আপনার ওজন
একদিনে কমে যাবে না।এই পোস্টে আমরা দেখব ওজন কমানোর উপায় কি এবং ওজন কমানোর
খাবার ।
ওজন কমানোর উপায় কি
শরীরের ওজন যখন স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন সেটা নারী বা পুরুষ
উভয়ের জন্যই অস্বস্তিকর।শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর কথা চিন্তা করলেই আমাদের
প্রথমেই যেই কথাটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে ডায়েট।
ডায়েট করা মানে অনেকেই মনে করেন খাবার না খাওয়া বা খাবারের পরিমাণ অতিরিক্ত
কমিয়ে দেওয়াকে।কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়েট হল বিশেষ অবস্থায় ব্যক্তি বিশেষে
নিয়ন্ত্রণ বা শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ।
সুষম খাদ্য গ্রহণে ব্যক্তির ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।সুষম খাদ্য তৈরিতে একজন
ব্যক্তির বয়স,ওজন,উচ্চতাও কাজের ধরন ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যক্তির প্রয়োজনীয়
দৈনিক ক্যালোরি নির্ধারণ করা হয়।ওজন কমানোর জন্য অল্প খাবার বারে বারে খাওয়া
কিছু ক্যালরিবহুল খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে দেওয়া নিয়মিত হাটা এবং
ব্যায়াম করা।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
শরীরের বাড়তি ওজন আপনার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে?আপনি জানেন কি আপনার ঘরের
কোণে পড়ে থাকা এক টুকরো লেবুর শক্তি।এক টুকরো লেবু আপনার দুশ্চিন্তাকে নিমেষে
দূর করতে সক্ষম।লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো।
আরো জানুনঃ বুকের কফ বের করার সহজ উপায়
ওজন কমাতে লেবু হতে পারে চমৎকার একটি ম্যাজিক্যাল উপাদান।আমরা ওজন কমাতে কত কিছুই
না করি।তবে সবচেয়ে প্রচলিত কথা হচ্ছে লেবু পানি খেয়ে ওজন কমানো।লেবু পানিতে খুব
কম পরিমাণ ক্যালরি থাকে এ কারণে আপনি কমল পানীয় বাদ দিয়ে যদি লেবু পানি পান
করেন তাহলে ওজন কমাতে পারবেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের এক বার্তায় জানা যায় যে লেবু পানি উচ্চ
ক্যালোরি বা মিষ্টি যুক্ত পানীয় এর বদলে আপনি যদি নিয়মিত খেতে পারেন সেক্ষেত্রে
ওজন কমাতে পারবেন।মূলত লেবুর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।ভিটামিন
সি থাকার কারণে শরীরের চর্বি ও রেজিস্ট্যান্স কমায়।
ওজন কমানোর জন্য লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম
নিয়ম না মেনে খেলে আপনি উপকার পাবেন না।সবাই লেবু কে চিপে রস বা শরবত বানিয়ে
খেয়ে থাকে। এটি একটি সাধারণ পদ্ধতিতে লেবুর শরবত বা লেবু খাওয়ার নিয়ম।কিন্তু
ওজন কমানোর উপায় কি ও ওজন কমানোর জন্য লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেনা।
আরো জানুনঃ সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
নিজে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে তাতে লেবুর রস মিক্স
করে খেতে পারেন। অথবা নরমাল পানিতে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে গরম
পানিতে মিক্স করলে সব থেকে বেশি ভালো হয়।
ওজন কমানোর খাবার
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে এমন খাবার বেছে নিতে হবে যা হজম হয় ধীরে অর্থাৎ যেসব খাবার খেলে সহজে ক্ষুধা লাগে না। খাবারের পুষ্টি মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে ওজন কমাতে গিয়ে অপুষ্টিতে না ভোগেন।
তাই জেনে বুঝে ঠিক করতে হবে আপনার খাদ্য তালিকা।তাছাড়া রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত তেল যাতে না দেওয়া হয। ওজন কমানোর খাবার গুলো নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো।
- ক্যালোরি বিহীন ও আসযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন সালাদ,সবজি, সুপ।
- গ্রিন টি।
- জাম্বুরা একটি ফল আমরা অনেকেই হয়তো জানি না জাম্বুরা ওজন কমানোর জন্য উপকারী।
- পেস্তা বাদাম।
- লাল আটা দিয়ে রুটি খেতে পারেন।লাল আটা সহজে হজম হয় না তাই সহজে ক্ষুধাও লাগে না।
- চিয়া সিড।
- টক দই।
- ব্রোকলি।
- অলিভ অয়েল।
- পানি।
- লেবু বা লেবুর রস।
উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো নিয়মিত মেনে খেতে হবে।তাহলে দ্রুত ওজন কমাতে
পারবেন।আশা করছি ওজন কমানোর খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
ওজন কমানোর জন্য যেসব খাবার বাদ দিতে হবে
একটি সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।যদিও খাবার
ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনার শারীরিকভাবে ফিট হতে পারবেন।অনেকেই এই ক্যালোরি
মেপে খাওয়া বা নিজের পছন্দের খাবারগুলোকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কে
কষ্টকর মনে করেন।
আরো জানুনঃ ওজন বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার খেতে হবে
নিজেকে ফিট রাখতে হলে কিছুটা হলেও কষ্ট করতে হবে।তাই যেদিন থেকে ওজন কমানোর কথা
ভাববেন সেদিন থেকে ওজন কমানোর জন্য যেসব খাবার বাদ দিতে হবে তার একটি তালিকা
বানিয়ে নিন।
- জ্যাম-জেলি।
- মাখন।
- চকলেট
- ফাস্টফুড।
- মিষ্টি যুক্ত বা চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
- তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।
- ক্যালরিযুক্ত কিছু ফল যেমন: সবেদা,কলা,কাঁঠাল,আম,আতা ফল ।
- আলু ভাজা।
- ঘি।
- পেস্ট্রি
- কেক
- ক্যান্ডি বার
- পনির
- বার্গার,ফুচকা,চটপটি ইত্যাদি
দৈহিক সৌন্দর্যকে অটুট রাখতে বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন এসব খাবার বাদ দিয়ে।
নিজেকে সুন্দর ও ফিট রাখতে সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
অতিরিক্ত ওজন মানেই বাড়তি ঝামেলা সেই সঙ্গে থাকে বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা।গবেষণায়
দেখা গেছে শারীরিকভাবে ফিট মেয়েদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের মেয়েদের অসুস্থ
হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৬৬ শতাংশ।শরীরের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক মেয়ের
শারীরিক মানসিক ও হরমোন জনিত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় হচ্ছে। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার পরিহার করা।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। লাখ কফি খাওয়া।অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে আশযুক্ত
খাবার বেশি বেশি খেতে হবে কারণ এসব খাবার পানি ও তেল শোষণ করে আমাদের হজম
প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত ওজন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট খাবার পরিহার
করতে হবে।এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে সফট ড্রিংকস, দুধ, আলু, পাউরুটি, বিস্কুট
বিভিন্ন ধরনের শস্য ও চিনি যুক্ত খাবার। এসব খাবার শরীরে অনেকটা মেদ ও ওজন
বাড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে ডায়েটের পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই কিছু ব্যায়াম করতে হবে।তাই
প্রতিদিন কিছু সময় দড়ি লাভ খেলা এবং সাঁতার কাটতে পারেন। এসব ব্যায়ামে প্রচুর
পরিমাণে ক্যালরি ঝরতে সহায়ক করে।
ঘরোয়া ভাবে ওজন কমানোর উপায়
ঘরোয়া ভাবে ওজন কমানোর উপায় জানার আগে সারাদিনে যা খাচ্ছেন তার একটি লিখিত
হিসেবে রাখুন। ওজন কমাতে হলে আপনাকে জিভে লাগাম লাগাতে হবে। কি খাবেন আর কি খাবেন
না তার একটি তালিকা তৈরি করে নিন।সেই তালিকা অনুযায়ী খাবার খান। ঘরোয়া ভাবে ওজন
কমানোর জন্য সময় মত খাবার খাওয়া কিন্তু ভীষণভাবে দরকার।
এক বেলা না খেয়ে পরের বেলায় ভারী কিছু একেবারে বেশি খাবেন না।অল্প খান কিন্তু
বারে বারে খান।দুপুরবেলায় ভারী খাবার খেতে পারেন কিন্তু ডিনারের সময় অর্থাৎ
রাতের বেলা হালকা খাবার রাখুন। যেমন,একটি রুটি সবজি অথবা এক বাটি সুপ খেতে
পারেন।আপনি সারাদিনে কতটা পরিমাণে প্রোটিন খাচ্ছেন তার খেয়াল রাখা কিন্তু জরুরী।
ঘরোয়া ভাবে ওজন কমানোর উপায় বের করার আগে সারাদিনে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ
করছেন তার থেকে অন্তত ৫০০-৬০০ কিলো ক্যালোরি বাদ দিতে হবে।ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ও
সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীর চর্চা করুন।দিনে অন্তত এক ঘন্টা মন দিয়ে ব্যায়াম করুন
এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর জন্য অনেকে নানা রকম পদ্ধতির খোঁজখবর করেন।কাজের ব্যস্ততা ও সুযোগের
অভাবে ইচ্ছা থাকলে প্রতিদিন জিম করা সম্ভব হয় না।তাই আজকে জানাবো ব্যায়াম না
করে ওজন কমানোর উপায়।নিয়মিত পানি পান করলে অনেক শারীরিক জটিলতা দূর হয। ওজন
কমাতে চাইলে নিয়মিত পানি পান করা হলো প্রথম পদক্ষেপ।
পানি পান করলে বেশি সময় ক্ষুধা মুক্ত থাকা যায় ফলে খাবার গ্রহণের পরিমাণ
কমে।এছাড়া নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়।
চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।যাদের চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা
আস্তে আস্তে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিন।চিনি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যা
আপনার ওজন বাড়াতে পারে।
খাবারে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বাড়িয়ে দিন যেমন ডাল, ডিম,সয়া জাতীয় খাবার রাখুন
প্রতিদিন।খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান।এতে খাবার সহজে হজমযোগ্য হয়ে ওঠে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করছি এই পোস্টে সবাই জানতে পেরেছেন ওজন কমানোর উপায় কি এবং ওজন কমানোর
খাবার।এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।এবং আরো কিছু
জানার জন্য বিস্তারিত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url