রোজা রাখার নিয়ত,ইফতারের দোয়া ও রোজা ভঙ্গের কারণ
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া সম্পর্কে জানুন
আসসালামু আলাইকুম পবিত্র রমজানের রোজা রাখা আমাদের জন্য ফরজ এই কথাটা আমরা প্রায়
অনেকেই জানি। তবে রোজা রাখার নিয়ত ও রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে অনেকেই
জানিনা।যারা রোজা রাখার নিয়ত ও রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানেন না আজকের
পোস্টটি তাদের জন্য।
পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।হাদিসে
বলা আছে প্রতিটি মুসলমান সুস্থ-সবল থাকা অবস্থায় রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।তাই রোজা
রাখার নিয়ত ও রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানতে সম্পন্ন পোস্টটি মনোযোগ সহকারে
পড়ুন।
সূচিপত্রঃ রোজা রাখার নিয়ত,ইফতারের দোয়া ও রোজা ভঙ্গের কারণ
ভূমিকা
রোজার আরবি শব্দ হচ্ছে সাওম। এর অর্থ হলো বিরত থাকা। আল্লাহকে রাজি খুশি করার
জন্য এবং ইবাদতের নিয়মে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও
পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা কে সাওম বা সিয়াম বলে থাকে।সিয়াম বা সাওম সঠিকভাবে পালন
করার জন্য রোজার ফরজ কয়টি, রোজা রাখার নিয়ত, রোজার নিয়ত কখন করতে হয়, রোজা
ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি,ইফতারের দোয়া সহ রোজা সম্পর্কিত আরো সকল তথ্য এই
পোস্টটে তুলে ধরা হয়েছে।
রোজার ফরজ কয়টি
রোজা রাখার জন্য অবশ্যই রোজার ফরজ গুলো জানতে হবে।রোজার ফরজ সম্পর্কে জানা থাকলে
তার জন্য ফরজ গুলো আদায় করার সুবিধা হয়।রোজা রাখার আগে রোজার ফরজগুলো আগে জেনে
নেওয়া যাক। রোজার ফরজ মোট তিনটি যেমনঃ
- রোজার নিয়ত করা।
- ফজরে সেহরি খাওয়ার পর থেকে সন্ধ্যা ইফতারের আগ পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা।
- স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা।
কেউ যদি রোজার কোন ফরজ পালন না করে তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।রোজা রেখে
ইবাদতের প্রতিদান স্রষ্টা নিজের হাতে প্রদান করেন।
রোজার নিয়ত কখন করতে হয়
রোজার নিয়ত করা ফরজ নিয়ত অর্থ হচ্ছে সংকল্প। আপনি যদি মনে মনে সংকল্প করেন আমি
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখছি তাহলে আপনার নিয়ত হয়ে
যাবে। মুখে বলা অতি জরুরি নয়।তবে ফরজ রোজার জন্য নিয়তি রাতে করাই উত্তম।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
যদি কোন কারণে রাতে নিয়ত না করতে পারেন তবে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘন্টা
আগেই নিয়ত করলেও আপনার রোজা হয়ে যাবে। প্রতিটি আমল এর আগে নিয়ত করা জরুরী।
রোজার নিয়ত কখন করতে হয় আশা করি জানতে পেরেছেন চলুন জেনে নেওয়া যাক রোজা রাখার
নিয়ত সম্পর্কে।
রোজা রাখার নিয়ত
ফজরের আগে নির্দিষ্ট সময় সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা রাখা শুরু করতে হয়।তবে
সেহরি খাওয়ার পরে রোজা রাখার নিয়ত করে নিতে হয়। রোজা রাখার নিয়ত হল :
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম ,মিন শাহরি রমাদানাল
মুবারাক,ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আমিল।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত
ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (বা নিয়্যত) করলাম। এতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর।
নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
শবে বরাতের রোজা রাখার নিয়ত
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোন প্রকার রোজা রাখার বিধান নেই।আমাদের প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পবিত্র সাবান মাসে তিনটি করে রোজা রাখতেন। চাইলে আপনারাও
শবে বরাত উপলক্ষে তিনটি রোজা রাখতে পারেন তবে নফল এই রোজা রাখার ক্ষেত্রে
নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত নেই।নিয়ত হচ্ছে আপনার মনের সংকল্প। আপনি যদি মনে মনে নিয়ত
করেন যে আপনি আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য শবে বরাতের রোজা রাখতে চাচ্ছেন তাহলেই
আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।
কাজা রোজা রাখার নিয়ত
কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা না রাখে বা অনিচ্ছায় রোজা
ভেঙে ফেলে তাহলে তাকে কাজা রোজা ও কাফফারা আদায় করতে হয়।কাজা রোজা রাখার জন্য
নিয়ত করা অতি জরুরী। হাদিসে বর্ণিত আছে যে প্রতিটি আমল করা নিয়তের উপর
নির্ভরশীল।
কোন মুসলমান ব্যক্তি যে কয়দিনের রোজা রাখতে পারেনি সে কয়দিনের কাজা রোজা করতে
হবে।কাজা রোজা রাখার নিয়ত সেহরি খাওয়ার আগে আপনি মনে মনে করলেই হবে। যে
ব্যক্তির রমজানের রোজা ছুটে যায় তার রোজাগুলো আদায় করা আবশ্যক।
নফল রোজার নিয়ত বাংলায়
আপনি নফল রোজা করার সময় যেকোনো ভাবেই নিয়ত করতে পারেন সেটি আরবি হোক অথবা
বাংলায়।নিয়ত কথাটার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা পোষণ করা। আপনি যদি মনে মনে চিন্তা করেন
আপনি একটি নফল রোজা পালন করতে চান তাহলে আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।নফল রোজা রাখার
জন্য মনে মনে নিয়ত করবেন যে আপনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রোজাটি রাখতে
চাচ্ছেন। খাবার সামনে নিয়ে বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু
করবেন। এতেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।
ইফতারের দোয়া
ইফতারের মুহূর্ত রোজাদারদের জন্য পরম আনন্দময়।সেহেরী খাওয়ার পর সারাদিন
পানাহারের মাধ্যমে যখন রোজার সমাপ্তি করা হয় সেটাকে ইফতার বলে।নবী করিম (স:)
বলেন রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দময় সময় যথাঃ
১.সারাদিন পর যখন ইফতার করতে বসে
২.প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময়(অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময়।
ইফতারের সময় যে দোয়াটি পড়তে হয়
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্কিকা ওয়া আফতারতু
বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার
দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করেছি।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথা কমানোর দোয়া
এতক্ষণ আমরা রোজার নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছি এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক
রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি।
রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হবে যে আপনি এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আপনার রোজাটি
ভঙ্গ হয়ে যায়। রোজা একটি পবিত্র জিনিস যেটি আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য করা
রাখা হয়। তবে কিছু কিছু বদভ্যাসের কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। রোজা ভঙ্গের কারণ
কয়টি ও কি কি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- ভুল করে কোন কিছু খাওয়া বা পান করার পরে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পন করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- নিজে ইচ্ছা করে বমি করলে ভঙ্গ হয়ে যায়।
- রোজা রাখা অবস্থায় সিগারেট বিড়ি সেবন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- মহিলাদের হায়েয ও নিসাফের রক্ত বের হওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- হস্তমৈথুন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- রাত মনে করে সুবেহ সাদিকের পর সেহরি খাওয়ার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- কাঁচা চাল বা আটা অথবা একত্রে অনেকগুলো লবণ মুখে নেওয়ার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- নিজের মুখের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
- শরীরের মধ্যে ইনজেকশন বা স্যালাইন দিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় ।
- রোজা রাখা অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজলে বৃষ্টির পানি মুখের ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
আশা করি সবাই রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যাক স্বপ্নদোষ
হলে কি রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় অথবা স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে পড়ে
কিনা।
স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা রাখা অবস্থায় যদি কারো স্বপ্নদোষ হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ ঘুমের
মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সেই ব্যক্তি এই কাজটি করে নাই সুতরাং তার রোজা ভাঙবে না।
কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায়।স্বপ্নদোষ হওয়ার পরে পাক পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসল
আদায় করা জরুরী। যারা মনে করেন রোজা থাকা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে রোজা
ভেঙে যাবে তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সুতরাং অনিচ্ছাকৃত যদি কোন কিছু হয় তাহলে
আপনার রোজা ভাঙবে না।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুগণ সামনেই আসছে আমাদের পবিত্র মাহে রমজান। তাই এই পোস্টে আপনাদেরকে
জানানো হয়েছে রোজা রাখার নিয়ত, ইফতারের দোয়া, রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি
কি,রোজার ফরজ কয়টি সহ রোজার সম্পর্কিত সকল তথ্য।আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা
উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারা উপকৃত
হয়।
রোজা রাখার নিয়ত ইফতারের দোয়া ও রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি সম্পর্কে আরো
কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url