দাঁতে পোকা বা ব্যাথা হলে করনীয় কি
বিট লবণের উপকারিতা জানুন
আসসালামু আলাইকুম ছোট বড় সব মানুষেরই দাঁতের ব্যাথা বা পোকার সমস্যা থাকে। তাই
আজকে আপনাদের জানাবো দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি এবং দাঁতে পোকা হওয়ার কারণ
সম্পর্কে।
কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা। যত্নের অভাবে দাঁতে পোকা বা ব্যাথা
হয়।আসলে দাঁতের পোকা বলতে কিছুই নেই। এইটাকে বলা হয় ডেন্টাল ক্যারিজ। দাঁতের
দৃশ্যমান কোনো পোকা থাকে না।
সূচিপত্রঃ দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি
ভুমিকা
দাঁতের পোকা বা ব্যথা এইটা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া,ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয়
রোগের জন্য দায়ী।দাঁতে ব্যাথা বলে কয়ে আসে না।হঠাৎ যদি দাঁতে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়
দিশেহারা হওয়ার কিছুই নেই।কিছু উপায় জানা থাকলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দাঁত ব্যাথা
থেকে মিক্তি পাওয়া যাবে।চলুন জেনে নেওয়া যাক দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি, দাঁতে
গর্ত হলে করণীয় কি, দাঁতে ব্যথা হলে যে দোয়া পরতে হয় এবং দাঁতের পোকা বের করার
গাছ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোজনা করা হলো।
দাঁতে পোকা বা ব্যাথা হওয়ার কারণ
সাধারণত যে কোনো ধরনের মিষ্টি খাবার,চিনিযুক্ত খাবার,চকলেট,চুইংগাম,ক্যান্ডি
ইত্যাদি খাওয়ার পরে মুখে অ্যাসিড তৈরি হয়।যেটা ধীরে ধীরে দাঁতের উপরে শক্ত আবরণ
'এনামেল' ক্ষয় করে থাকে।যারা এসব মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাবার বেশি খায় তাদের
ক্ষেত্রে এনামেল ক্ষয় হয়ে দাঁতে ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়।
আরো পড়ুনঃ হাত পা ঘামার কারণ
দাঁতের মধ্যে ছিদ্র বা গর্ত হলে তাতে ময়লা ও খাদ্য কণা জমা হয়।ফলে দাঁতে পোকা হয়
এবং দাঁতে ব্যথা শুরু হয়। দাঁতে পোকা হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে যেমনঃ
- সাধারণত যেগুলো খাবার আমাদের মুখের দাঁতের ফাঁকে অনেক সময় ধরে আটকে থাকে সেই খাবারগুলো কে আমাদের মুখের ভিতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া পচন ধরায়। যার ফলে দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে এবং আমাদের দাঁতের ব্যথা তৈরি করে।
- আমাদের দাঁতগুলো যখন অনেক ক্ষয় হতে থাকে তখন ব্যাকটেরিয়া এবং এসিড আরো দাঁতের গভীরে ঢুকতে থাকে। যার ফলে আমাদের দাঁতের স্নায়ু ও শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক ব্যাথা শুরু হয়।
- আমাদের মুখের ভিতরে থুতু বা লালার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে আমাদের মুখে ভিতরে কেবিটি তৈরি হতে থাকে কারণ আমাদের মুখের ভিতরে থাকা থুথু এবং লালা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- বিশেষ করে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আলু, রুটি, ভাত, চকলেট চুইংগাম এ সকল কার্বোহাইড্রেট বা সক্রিয় জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁতের ফাঁকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বেশি হয় যার ফলে আমাদের মুখের ভিতর ব্যাথা ও পোকা তৈরি হয়।
আমাদের দাঁতের যত্ন রাখা অতি জরুরী কারণ আমাদের দাঁত সৌন্দর্যের একটি অংশ। আপনি
যদি কারো সামনে কথা বলেন অথবা হাসি দেন তখন যদি আপনার দাঁতে কালো দাগ অথবা দাঁতের
পোকা থাকে। তাহলে এমন অবস্থা সবার সামনে আপনি লজ্জায় পরতে পারেন।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর কারণে দাঁতে পোকা বা ব্যাথা হতে পারে সুতরাং এই সকল
খাবার থেকে বিরত থাকবেন। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক দাঁতে পোকা হলে করণীয়
কি ঘরোয়া কিছু উপায় সম্পর্কে।
দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি
দাঁতে পোকা হলে করনীয় কি এই বিষয়ে গুগলে সার্চ করতে করতে বর্তমানে মানুষ হতাশ
হয়ে যায়। দাঁতে পোকা হলে করণীয় কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এ সকল ঘরোয়া উপায়
জানলে আপনি দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।
দাঁতে ক্যাভিটি হচ্ছে বা ব্যাথা হচ্ছে বুঝতে পারলে সময় নষ্ট না করে দ্রত চিকিৎসা
শুরু করুন।ক্যাভিটি বা ব্যাথা সাভাবিক থাকলে ঘরোয়া ভাবে মুক্তি পেতে কিছু উপায়
নিচে উল্লেখ করা হলো।
- দাঁতের ক্যাভিটি বা ব্যাথা দূর করতে সবার আগে ঠিক করে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।ফ্লোরাইড যুক্ত টুথ পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের ক্যাভিটি বা ব্যাথা দূর করা যাবে।
- দুটি লবঙ্গ চিবিয়ে ব্যাথা স্থানে রাখলে ব্যাথা দূর হয়ে যায়।
- এক কোয়া রসুনের সাথে লবণ মিশিয়ে দাঁতে লাগান।বেশি ব্যাথা হলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খান।
- লবঙ্গের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কয়েক মিনিট দাঁতে লাগিয়ে রাখুন ব্যাথা কমে যাবে।
- এক গ্লাস কুমকুম গরম পানির সাথে এক চা-চামুচ লবণ নিয়ে কুলকুচি করুন।দাঁতের পোকা দূর করার পাশাপাশি দাঁত ব্যাথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে পানি আর লবণ।
- এছাড়াও ক্যালশিয়াম,ফসফরাস ও মিনারেল জাতীয় খাবার খেতে হবে।ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাবেন দাঁত ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- দুটি পেয়েরা পাতা চিবিয়ে ব্যাথার দাঁতে চেপে রাখুন আরাম পাবেন।
- এক টুকরা বরফ কাপড়ে মুড়ে দাঁতে চেপে রাখুন ব্যাথা কমা শুরু করে দিবে।
- ১০ থেকে ১৫ টি তুলসী পাতা নিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করে পেস্ট তৈরি করুন। এবং সেই পেস্ট দিয়ে নিয়মিত ব্রাশ করুন এভাবে দাঁতের গোড়ায় কালো দাগ দূর হয়ে যায় এবং দাঁতের কেভিটিগুলো দূর হয়ে যায়।
- কালো মাজন অথবা কালোজিরা যেটাতে পোকা ধরেছে ওই দাঁতের উপরে লাগিয়ে রাখলে দাঁতের পোকা শুকিয়ে ফেলে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি এবার আপনাদের জানাবো
দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি।
দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি
দাঁতের মধ্যে নানা কারণে গর্ত হতে পারে। যেমন দন্তক্ষর বা ডেন্টাল ক্যারিজ,দাঁত
ভেঙে গিয়ে গর্ত হওয়া বা রুট ক্যানেল চিকিৎসার জন্য গর্ত হওয়া। দাঁতের মধ্যে
গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তাতে ময়লা,খাদ্যকনা ইত্যাদি জমে সংক্রমণ হয়।তারপর থেকে
আস্তে আস্তে দাঁত ব্যথা শুরু করে ও শিরশির অনুভূতি হয়।
বিশেষ করে শিশুদের এই গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তারা ব্যথায় কষ্ট পায় ও কিছু খেতে
গেলেই দাঁত শিরশির করে ওঠে।দাঁতের মধ্যে গর্তের লক্ষণ দেখা মাত্রই দেরি না করে
শূন্য জায়গাটা ভর্তি করে নেওয়া উচিত।ধীরে ধীরে যদি গর্তের পরিমাণ বেড়ে যায়
তাহলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়।তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা ও জটিল হয়ে পড়ে।
ভাঙা দাঁতকে আজকাল ফিলিং ম্যাটেরিয়াল বা লাইট কিউর দিয়ে সুন্দরভাবে পূরণ করা
যায়। যা দেখতে স্বাভাবিক দাঁতের মতো হয়।ডেন্টাল ক্যারেজ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই
ছোট কালো গর্তের মতো দেখায়।তখন কেউ বুঝতে পারে না তার দাঁতের মধ্যে ডেন্টাল
ক্যারিজ হয়েছে।গর্তের মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ার পরে কেবল ধরা পড়ে।
দাঁতের পোকা বের করার গাছ
এক নিমেষে প্রচন্ড দাঁতের ব্যথা কমিয়ে দিতে পারে একটি মাত্র গাছের রস।এই গাছটি
আমাদের সকলের বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে পাওয়া যায়। গাছটির নাম হচ্ছে আকন্দ গাছ
(Giant Milkweed)।এই আকন্দ গাছের রস ব্যথাস্থানে লাগানো মাত্রই দাঁতের ব্যথা কমে
যাবে।
দাঁতে ব্যথা হলে যে দোয়া পড়বেন
বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীরে যে কোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে। তার মধ্যে মারাত্মক
ব্যথা হচ্ছে দাঁতের ব্যথা।দাঁতের ব্যথা মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে।যা সহ্য করা
অনেক কঠিন। কোরআন-সুন্নহার আমলের দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।যে সকল মুসলমান নামাজের
সময় নিয়মিত মেসওয়াক করে তারা দাঁতের যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত
থাকে।দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কুরআনের একটি আমল রয়েছে।
আয়াতটি হলোঃ কুল হুয়াল্লাজি আংশাআকুম ওয়া ঝাআলালাকুমুস সাম্আ ওয়াল
আফয়িদাতা ক্বালিলাম্ন তাশকুরুন - সুরা মুলক : আয়াত ২৩ ।এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করলে
ইনশাল্লাহ দাঁতের ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
পরিশেষ কথা
আশা করছি আমার এই আরর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।দাঁতে পোকা হওয়ার কারণ,দাঁতে
পোকা হলে করণীয় কি, দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি এবং দাঁতে ব্যথা হলে যে দোয়া
পড়তে হয় সেই সম্পর্কে আশা করি জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত
হয়ে থাকেন।
তাহলে আপনার বন্ধুদের কেউ উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার
করে।এতক্ষণ আটে গিলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো
আরর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আয়াত টিপসে।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url