সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়?বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে অনেক উপকার মিলবে।তাই এই আর্টিকেলে সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখা অতি জরুরি কারণ খেজুর আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাড়ায় না খেজুর আমাদের চুল
ও ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
ভূমিকা
খেজুর আমাদের সবার জন্যই অনেক উপকারী। এতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে।যার
কারণে আমাদের শরীরের নানা রকম ভিটামিন পায়।তাই আজকের সকালে খালি পেটে খেজুর
খাওয়ার উপকারিতা, খেজুরের পুষ্টিগুণ, খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়ম,ওজন কমানোর জন্য
খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা
করব।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
আমাদের শরীরের জন্য যেসকল ভিটামিন প্রয়োজন তার বেশির ভাগই রয়েছে খেজুরে।তাহলে
চলুন খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা যাক।ভিটামিন খেজুরে প্রচুর পরিমাণ রয়েছে
এ, বি১,বি২,বি৩, বি৫,ও সি ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য অতি জরুরী।শুধু তাই নয়
আরো রয়েছে প্রোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার,সালফার, আয়রন,ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।
প্রতি ৩০ গ্রাম অথবা ৪ থেকে ৫টি খেজুরের রয়েছে
- ক্যালোরি ৯০
- প্রোটিন ১ গ্রাম
- ফাইবার ২.৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১৩ মি.লি. গ্রাম
খেজুরের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করার মত নয়। বুঝতেই পারছেন খেজুর আমাদের শরীরের জন্য
কতটা প্রয়োজনীয়। তাই সবাই চেষ্টা করবেন খাদ্য তালিকায় সর্বপ্রথম খেজুর রাখার
জন্য।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়
খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল।যা আমাদের কাছে অতি পছন্দের। খেজুর
আমাদের শরীরের শক্তির একটি ভালো উৎস।এর জন্য খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর খালি পেটে কিছু পরিমাণ
খেজুর খাবেন।
কারণ খেজুর হলো ক্যালরিতে ভরপুর একটি পুষ্টিকর ফল।এতে প্রচুর পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে সারাদিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।এবং
সারাদিন শরীরে এনার্জি পেতে সকালে খালি পেটে খেজুর খাবেন।
খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ইতিমধ্যে খেজুরের পুষ্টিগুণ ও খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন।এখন আমরা আলোচনা করব খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।সকালে ঘুম থেকে
ওঠার পরে খালি পেটে নাস্তা খাওয়ার মিনিমাম ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে খেজুর খেতে
হবে।যদি কারো সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকে তাহলে মিনিমাম আধাঘন্টা আগে পরিমাণ
খেজুর খেয়ে নিবেন।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
এতে শরীরের ক্লান্তি আসে না পাশাপাশি পেট থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং
শরীরের প্রচুর পরিমাণ শক্তি যোগায়।তাছাড়া সারারাত কিছু পরিমাণ খেজুর পানিতে
ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পরের দিন সকালে খালি পেটে পানি সহ খেজুর খেয়ে নিতে পারেন।
সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের শরীরে প্রোটিন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।এটি আমরা অতি সহজে খেজুরের মাধ্যমে
পেতে পারি।খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল।বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেছেন
খেজুরের প্রায় ৮০% চিনি জাতীয় উপাদান রয়েছে যা সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে
আমাদের অনেক উপকার আসে।তাই এখন আমরা খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানবো।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও
প্রাকৃতিক আশঁ পূর্ণ।যারা প্রতিনিয়ত খেজুর খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিটা কম
থাকে ।
হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতাঃ খেজুরে আয়রন থাকার ফলে হৃৎপিন্ডের
কার্যক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং যাদের দুর্বল হৃৎপিণ্ড তাদের জন্য সবথেকে নিরাপদ
ওষুধ হচ্ছে খেজুর।
মজবুত হার গঠনঃ খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় মজবুত
ভাবে গঠন করতে সাহায্য করে।তাই যাদের হাড়ের সমস্যা তারা প্রতিদিন কিছু পরিমাণ
খেজুর খেতে পারে।
কর্মশক্তি বৃদ্ধিঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে
খেজুরের দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে আমাদের শরীরে । সারাদিন কাজের পর সবার
শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কর্মশক্তি কমে যায়। কিছু পরিমাণ খেজুর খাওয়ার ফলে
আবার আমাদের কর্মশক্তি বেড়ে যায়।
রাতকানা রোগঃ যারা রাতকানা রোগে আক্রান্ত আছেন তারা প্রতিদিন সকালে
এবং রাতে ঘুমের আগে কিছু পরিমাণ খেজুর খেয়ে নেবেন। কারণ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন থাকায় আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ খেজুরে যে সকল পুষ্টি উপাদান আছে সেগুলো দ্বারা আমাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়।শুধু তাই না আমাদের খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।
হার্টের সমস্যাঃ বর্তমানে অনেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগেন। তাদের জন্য খুব জরুরী
খেজুর। কেননা খেজুর দুর্বল হাতকে মজবুত করতে সক্ষম ভাবে কাজ করে।প্রতিদিন সকালে
খালি পেটে খেজুর খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা অতি জলদি ঠিক হয়ে যাবে।
চুলের গোড়া মজবুত
অনেকেরই মাথার চুল পড়া সমস্যায় ভুগেন। কারণ মাথার চুল মানুষের সুন্দর্য
বাড়ায়।এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুরু করুন খেজুর খাওয়া। কারণ খেজুরের
যে পরিমাণ ভিটামিন ও প্রোটিন রয়েছে তা আপনার চুল পড়ার সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম
হবে।
ত্বকের সৌন্দর্য
অনেকেরই অতিরিক্ত বয়স না হতেই শরীরের চামড়া কুঁচকে যায়। তারা প্রতিদিন খাদ্য
তালিকায় খেজুর রাখুন কারণ খেজুরে রয়েছে ভিটামিন বি,যা শরীরের ত্বকের পক্ষে
অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত খেজুর খান দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার শরীরের চামড়া ঠিক
হয়ে যাবে এবং শরীরের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
হিমোগ্লোবিন বিদ্ধি
খেজুরে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকার কারণে শরীরের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। তার ফলের
শরীরের রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে শরীর হিমোগ্লোবিন
বেড়ে যায়।
গর্ভবতী নারীদের জন্যঃ খেজুর গর্ভবতী নারীদের জন্য অনেক উপকারী।কারণ
খেজুরে থাকা আয়রন গর্ভবতী নারীদের রক্তে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। খেজুরে
ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যার ফলে আগত শিশু পরিপূর্ণভাবে ভিটামিন পায়।
যৌন শক্তিঃ পুরুষদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খেজুর।কারণ খেজুর খেলে
পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায় ফলের সহজে কোন রোগ আমাদের শরীরের আক্রান্ত করতে পারে না। শুধু তাই নয়
শরীরে রক্তশূন্যতা সমস্যা থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে নানান ধরনের রোগের মুক্তি
হচ্ছে খেজুর।আশা করছি সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষনে
সবাই বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
খেজুর যেহেতু অতি সুস্বাদু ও মিষ্টি খাবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও অনেক ধরনের ভিটামিন।তাই বলে এই নয় যে আমরা
এই খাবারটি সারাদিন প্রচুর পরিমাণে খাবো।অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া ঠিক না এতে
বিপরীত হতে পারে।
তাই দিনে পরিমাণ মতো খেজুর খেতে হবে। দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি বা ১০০ গ্রাম খেজুর
খেতে পারেন।এর ফলে আপনার শরীরে মিলবে ২৭৭ ক্যালরি।খেজুরের যে হত প্রচুর পরিমাণে
মিষ্টি রয়েছে। এর জন্য বেশি পরিমাণ খাওয়া উচিত হবে না।
দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
দুধ যেমন আমাদের পছন্দের এবং খুব উপকারী তেমনি শুকনো ফল হিসেবে খেজুর আমাদের খুব
পছন্দের এবং উপকারী।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ
উপাদান।আমাদের শরীরের জন্য দুধ ক্যালসিয়ামের উৎস তার সঙ্গে চার থেকে পাঁচটি
খেজুর মেশান তাহলে খাবারের পুষ্টিগুণ আরো অনেকটাই বেড়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ বিড়াল পালনের উপকারিতা জানুন
দুধের সাথে খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুর্বলতা দূর
করে।অনেক মানুষ ওজন বাড়ানোর জন্য নানা রকমের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোন
ওষুধে কাজ হচ্ছে না।তারা প্রতিদিন নিয়মিত গরম দুধের সাথে কয়েকটি খেজুর ভিজিয়ে
খেতে পারেন।তাহলে প্রাকৃতিকভাবে অতি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি লাভ করতে পারবেন।
তাছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন।এতে রাতের ঘুম
ভালো হবে।খেজুর ও দুধ উভয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। দুইটা জিনিস একসাথে
মিশিয়ে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিন ও প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এই দুটি
জিনিস একসাথে খেলে।বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে জানায় দুধের মধ্যে খেজুর মিশিয়ে খেলে
শরীরের জন্য অনেক উপকার এবং খাবারটি ১০০% স্বাস্থ্যকর বলে মানা হয়।
ওজন কমানোর জন্য খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
ওজন কমানোর জন্য মানুষ কত ডায়েট করে। কত ধরনের মিষ্টি সুস্বাদু খাবার ত্যাগ করতে
হয়। তবে মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করলে আপনি এক্ষেত্রে খেজুরের উপর ভরসা রাখতে
পারেন।হলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুর কিভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।খেজুরের
মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায় কি ও ওজন কমানোর খাবার
যার ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেটে ক্ষুধা লাগে না।যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য
খেজুর একটি কার্যকারী খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ক্ষুধা কম লাগে
এবং অতিরিক্ত খাওয়া লাগে না।যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
খেজুরে অতি পরিমানে ফাইবার থাকার ফলে মলত্যাগের প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়।তাই বলে
অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া যাবেনা পরিমাণ মতো খেতে হবে।আশা করি ওজন কমানোর জন্য খেজুর
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সবাই জানতে পেরেছেন।
মন্তব্য
পুষ্টিবিদদের মতে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই খেজুর থেকে আসে।
এছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে খাদ্য তালিকায় শুকনো খেজুর রাখতে পারেন।এতক্ষণে সবাই
খেজুরের পুষ্টিগুণ ও সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পেরেছেন।
এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হয়।এতক্ষন মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url