বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় ২০২৪

ফরজ গোসলের নিয়ম জানুন বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এবং যাকাত কাদের উপর ফরজ এই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই।এখন প্রায় মানুষ গুগল এ সার্চ করে বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় । তাই এই আর্টিকেলে যাকাত সম্পর্কে সকল তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
পবিত্র আল কুরআনের যাকাত সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে।যাকাতের কারণে মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহতালা যাকাতের কারণে কেউ বর্ধিত করে দিয়েছে।তাই যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাদের যাকাত দেওয়া উচিত।বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এবং যাকাত কাদের উপর ফরজ জানতে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্রঃ বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়

ভূমিকা

সঠিকভাবে যাকাত আদায় করলে আমাদের সমাজের গরিব বা দুর্বল লোকেরাও আর্থিকভাবে সবল হয়ে ওঠে। যাকাত আদায় করার ফলে আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পায়। যাকাত আদায় করার ফলে ধনী ও গরীবের মাঝে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।তবে অনেক মানুষই জানে না যাকাত অর্থ কি, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি, যাকাত কাদের উপর ফরজ, যাকাত কাদের দেওয়া যাবে,বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়।এই পোস্টটি তাদের জন্য যারা যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

যাকাত অর্থ কি

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন মুসলমান ব্যক্তির যদি নিসাব পরিমান সম্পদ অতিক্রম করে তবে প্রতিবছর গরীব-দুঃখীদের মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ বিতরণ করাকে যাকাত বলে।যাকাতের অর্থ হল পবিত্র করা, বৃদ্ধি বা উন্নতি।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি

দৈনিক ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। ঠিক আর্থিক ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যাকাত। চলুন জেনে নেওয়া যাক যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি
  • পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়া।
  • নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
  • বালেক হওয়া বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
  • স্বাধীন বা মুক্ত হওয়া।
  • নেসাব পরিমাণ সম্পদ নিত্য প্রয়োজনীয়ত থেকে অতিরিক্ত হওয়া।
  • নিজের মালের উপর সম্পন্ন মালিকানা থাকা।
  • বিবেক সম্পূর্ণ বা জ্ঞানী মানুষ হওয়া।
এই সকল শর্ত গুলো যার মধ্যে পূরণ হয়েছে তার যাকাত ফরজ। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি আশা করি জানতে পেরেছেন এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক যাকাত কাদের উপর ফরজ।

যাকাত কাদের উপর ফরজ

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ। সারা বছরের মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজন মিটানোর পরে যার কাছে অতিরিক্ত পরিমাণে সম্পদ থাকবে তার ওপরে যাকাত ফরজ।
কোন ব্যক্তি যদি ঋণ হয়ে থাকে তারপর ঋণ মুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার উপরে যাকাত ফরজ।কোন ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল থাকলে যাকাত ফরজ হবে।

কেন যাকাত আদায় করা উচিত

আমাদের সমাজে একজন ব্যক্তির অনেক টাকার সম্পদ রয়েছে কিন্তু প্রতিবেশী অনাহারে রয়েছে এটা ইসলাম কোনদিন মেনে নেয় না। এর জন্য ইসলামের যাকাতের বিধান রয়েছে। যাকাত ছাড়া ইসলামের দিন পরিপূর্ণতা লাভ করে না।কোন ব্যক্তির তার প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত বেশি সম্পদ থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে।

আল কুরআনের সূরা বাকারায় উল্লেখ করা হয়েছে তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর, রুকুকারিদের সঙ্গে রুকু কর।আমাদের ইসলাম চায় ধনী-গরীব সবাই সুন্দরভাবে জীবন যাপন করুক।এর জন্য ধনী ব্যক্তিকে সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করতে হবে।

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় ২০২৪

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সে সম্পর্কে অনেকেই দুশ্চিন্তের আছে।কারণ সঠিকভাবে যাকাত প্রদান না করলে সম্পদ হারাম হয়ে যায়। এবং যাকাত সঠিকভাবে প্রদান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় বা উন্নতি হয়।নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত ফরজ হয়।নিসাব পরিমান সম্পদ হলো সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপা।

বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী যার কাছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা আছে তাকেই যাকাত দিতে হবে। এটা নির্ভর করে আপনার রুপার মূল্যের উপর। বাজার মূল্যের রুপার মূল্য বেশি থাকলে আরেকটু বেশি দিতে হবে অথবা কম থাকলে কম টাকার হিসাব করতে হবে।৫৮৫ গ্রাম রুপার মূল্যের সমান অর্থ আপনার কাছে যদি নগদ অর্থ থাকে তাহলে যাকাত ফরজ হবে।
তবে সেই টাকার মালিক আপনাকে নিজেই হতে হবে এবং পূর্ণ হিজরির এক বছর আপনার কাছে থাকতে হবে। এবং আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে তাহলে সে সম্পদের যাকাত ফরজ হবে।বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় আশা করি সবাই জানতে পেরেছেন। এবার জানুন কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ।

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

সব ধরনের সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয় না। ইসলামী আইনে কিছু নির্দিষ্ট সম্পদ রয়েছে যেগুলোর উপরে যাকাত ফরজ। চলুন জেনে নেই কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ।
নগদ অর্থের উপর যাকাত ফরজ।

  • সোনা, রুপা বা অলংকার এর উপরে যাকাত ফরজ।
  • বাণিজ্যিক পণ্যের উপরে যাকাত ফরজ।
  • পালিত গবাদি পশু যেমন ত্রিশটির উপর গরু বা মহিষ অথবা ৪০টির উপর ছাগল থাকলে যাকাত ফরজ।
  • উৎপাদিত কৃষি ফসলের উপর যাকাত ফরজ।
সাধারণত উপরে উল্লেখিত জিনিসগুলোর উপরে যাকাত ফরজ হয়।কোন কোন সম্পদের উপরে যাকাত ফরজ আশা করি সবাই জানতে পেরেছেন।এবার জানব যাকাত কাদের দেওয়া যাবে।

যাকাত কাদের দেয়া যাবে

যাদের প্রচুর পরিমাণে সম্পদ রয়েছে তাদের উপরে যাকাত ফরজ তবে যাকাত দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে যেমন
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  • ফকির
  • মিসকিন
  • আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি
  • মুসাফির
  • যাকাতের অংশ সংগ্রহকারী বা আমেল
  • গরিব মুসলিম
  • অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি
  • দাস মুক্তি বা গোলাম মুক্তির জন্য
সাধারণত এই সকল ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করা হয়। উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরাই যাকাতের জন্য সঠিক ব্যক্তি। তবে আপনার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যদি কেউ ঋণগ্রস্ত থাকে তাহলে তাকেও যাকাত দিতে পারেন। যাকাত কাদের দেওয়া যবে আশা করি জানতে পেরেছেন।

যাকাত কাদের দেয়া যাবে না বা ফরজ নয়

ইসলামের শর্ত মতে কিছু ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না যেমন :
হিসাব পরিমান সম্পদের মালিকের যাকাত দেওয়া যাবে না।
  • কাফির
  • নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নাবালক সন্তান।
  • যাদের মাধ্যমে আমরা দুনিয়া এসেছি তাদেরকে সহ উপরের স্তরের কাউকে যাকাত দেওয়া যাবে না যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা নানী ইত্যাদি।
  • স্বামী স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না।
  • স্কুল,মাদরাসা,হাসপাতাল বানানোর কোন কাজে যাকাত দেওয়া যাবে না।
  • নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়াতে এসেছে যেমন নিজের ছেলে-মেয়ে অথবা তাদের সন্তানাদি এদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
আশা করি সবাই যাকাত কাদের দেওয়া যাবে, যাকাত কাদের দেওয়া যাবে না সঠিক নিয়ম এবং সঠিক মাধ্যম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

স্বামী অথবা স্ত্রী কাকে যাকাত দিতে হবে

যাকাত কাকে দিতে হবে স্বামীকে নাকি স্ত্রীকে আমাদের সমাজে এরকম অনেক মতভেদ রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণ নির্ভর করে সম্পদের মালিকানার উপর। যদি আপনার স্ত্রী সম্পদের মালিক হয় তাহলে সেই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। আর যদি সম্পদের মালিক স্বামী হয় তাহলে স্বামীকে যাকাত প্রদান করতে হবে। মূল কথা হচ্ছে এখানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই যে ব্যক্তি যাকাত দেওয়ার মতো সম্পদের মালিক হবে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে।

লেখকের শেষ কথা

যাকাত আদায়ের কথা সরাসরি কুরআনের উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যাকাত আদায় করা অতি জরুরী। আশা করি সবাই আর্টিকেলটি পরে এতক্ষণে জানতে পেরেছেন যাকাত অর্থ কি, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি, বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়, কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ সহ যাকাত সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।

আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও যাকাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারে। এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যাকাত সম্পর্কিত কোন প্রকার প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আপনার মূল্যবান প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url