থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের সামনে তুলে ধরবো থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম ও তার বৈশিষ্ট্য এবং থাই পেয়ারা গাছের রোগ দমন।বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি ফল হচ্ছে পেয়ারা। ভীষণ এই জনপ্রিয় ফলের আরো একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে Psidium Guajva (পেসিদিয়াম গুয়াজাভা)।
সূচিপত্রঃ থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা
পেয়ারা সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল এবং দ্রুত বর্ধনশীল ফল।কমবেশি শব্দ রাতেই এখন পেয়ারা চাষ হয়ে থাকে তবে পেয়ারার মধ্যে সবথেকে সুস্বাদু মজাদার পেয়ারা হচ্ছে থাই পেয়ারা।তাই আজকে আমরা থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম, থাই পেয়ারা গাছের রোগ দমন,পেয়ারার চাষের সেচের পদ্ধতি,পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ুর ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেয়ারার জাত
বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের জাত এর পেয়ারা পাওয়া যায়।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেক উৎপাদিত জাত রয়েছে বাউ পেয়ারা ১,বাউ পেয়ার ২,বাউ পেয়ারা ৩,বাউ পেয়ারা ৪,৫,৬,৭,৮,৯।এরমধ্যে আরো রয়েছে কাজি পেয়ারা, বারি পেয়ার ১,২,৩,৪।এবং ইপসা পেয়ারার উদ্ভাবিত জাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদ্যালয় থেকে হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম
এইসব জনপ্রিয় পেয়ারা জাতের মধ্যে থাই পেয়ারা ৩,থাই পেয়ারা ৫ ও থাই পেয়ারা ৭ জাত সবথেকে জনপ্রিয়।থাইজাতের পেয়ারা খেতে খুবই মজাদার এবং সুস্বাদু। তাছাড়া অন্যান্য আরো কিছু জাত রয়েছে যেমন স্বরূপকাঠি,পলি পেয়ারা,কাঞ্চননগর, আঙ্গুর পেয়ার এবং দেশি জাতি পেয়ারা।
পেয়ারার উৎপত্তি
পেয়ারা উৎপত্তি আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে উৎপত্তি হয়। বিশেষ করে পেরু হতে মেক্সিকোর যে কোন উষ্ণ স্থানে।আনুমানিক দুই হাজার বছর পূর্বে এটি চাষাবাদে কৃষি চাষাবাদে আসে।তারপর থেকে পৃথিবীতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।বর্তমানে এশিয়া মহাদেশ গুলোর মধ্যে ব্যাপকভাবে পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে।উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ুর কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জাতের পেয়ারা দেখা যায়।
থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি
অন্য সব পেয়ারা জাতের মতই জ্যৈষ্ঠ আশ্বিন মাস পর্যন্ত থাই পেয়ারার চারা লাগানো হয়।থাই পেয়ারা চাষ করার পূর্বে কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো প্রয়োগ করলে পেয়ারা চাষে লাভবান হওয়া যায়। তাই থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
চারা রোপনের আগে অবশ্যই ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ৪০ কেজি গোবর সার,১৫০ গ্রাম এমওপি সার এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার ভালোভাবে একসাথে মিশাতে হবে।মানে ২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গবর মেশানো সার দিতে হবে। তারপর কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে জাগায় জাগায় গর্ত করতে হবে মিনিমাম ১.৫ ফিট থেকে ২ ফিট গর্ত করতে হবে।
পরে মিশ্রিত সারের সাথে কিছু মাটি মিশ্রিত করে প্রতিটা গর্ত ভর্তি করতে হবে। গর্ত সম্পন্নভাবে ভরাট করার পরে মিনিমাম ১০ থেকে ১২ দিন গর্তটি ভরাট করে রাখতে হবে। পরে গর্তের মাঝখানে থাই পেয়ারা চারাটি রোপন করতে হবে।চারা রোপন করার পরে অবশ্যই গাছের চারপাশে মাটি উঁচু করে দিতে হবে যাতে পানি এসে গোড়ায় না জমতে পারে।
এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গাছটি যাতে বাতাসে হেলেনা যায় তার জন্য গাছের সাথে শক্ত একটি লাঠি অথবা খুটি দিয়ে গাছটি ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে।অনেক সময় গাছ লাগানোর পরে গাছের পাতায় ক্লোরাসিস দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে ৮০ লিটার পানির সাথে ৪০০ গ্রাম চুন এবং ৪০০ গ্রাম জিংক মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। গাছের ভালোভাবে যত্ন নিলে অবশ্যই গ্রীষ্মকাল ও হেমন্তকালে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
গাছ কলম পদ্ধতি
ভালো গুনাগুন বজায় থাকা অবস্থায় গাছের কলম করা দরকার।মিনিমাম এক থেকে দুই বছর হয়ে যাওয়া একটি উপযোগী গাছের সুন্দর একটি লম্বা ডালের ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ডালের গোড়ায় কলম করতে হবে।তাহলে সেই কলম দিয়ে ভালো মানের থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি করতে পারবে।থাই পেয়ারা চাষের উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু সম্পর্কে জানুনবর্তমানে সব ধরনের মাটিতেই থাই পেয়ারা চাষ করা যায়।কারণ থাই জাতের পেয়ারা চারা গুলো সহনশীল হয়ে থাকে।
হাই পেয়ারার চাষের জন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধার সম্পূর্ণ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি সব থেকে বেশি উত্তম।পেয়ারা রোপনের পর যেহেতু পেয়ারার শিকড় মাটির ভিতরে থাকে তাই মাটির উর্বর ভাব থাকতে হবে।এই পেয়ারা গুলো উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুতে বেশি চাষ হয়। যা আমাদের দেশের আবহাওয়া সাথে মিল আছে।পেয়ারা চাষের জন্য ২৩° থেকে ২৮° সে. তাপমাত্রা আদর্শ।
পেয়ারার চাষের সেচের পদ্ধতি
খরা মৌসুমে নিয়মিত বাগানে সেচ দিতে হবে। যাতে করে বাগানের মাটির রস যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।কারণ মাটির রস শুকিয়ে গেলে কাছে চারা ভালোভাবে শক্তি পাবে না।পেয়ারা চাষে ভালো ফলন পেতে হলে প্রতিবার গাছের সার প্রয়োগ করতে হবে।এছাড়া বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পানির গোড়ায় পানি না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
থাই পেয়ারা গাছের রোগ দমন
বিভিন্ন ধরনের পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয় থাই পেয়ারা গাছ।যেমন সাদামাছি,ফল ছিদ্রকারী পোকা,ছাতরা পোকা। এসব প্রকার কারণে গাছের অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। তাই এসব পোকা দমনের জন্য ব্যবস্থাপন অনুসরণ করতে হবে।যেমন বাগানে পড়ে থাকা আক্রান্ত ফল অথবা পোকা কামড়ানো ফল কুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে অথবা দূরে অন্য কোথাও ফেলে দিতে হবে।পেয়ারার গায়ের পলিব্যাগ লাগানো,এবং ফেরোমন ফাঁদ ও বিষ টোপ ব্যবহার করতে হবে।
তাছাড়া সাদামাছি দমন এর জন্য প্রতি লিটার পানিতে সামান্য কিছু ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।অন্যান্য প্রকা দমনের জন্য ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর মেলাথিয়ন বা সিমবুশ কীটনাশক দিয়ে গাছে স্প্রে করতে পারেন।অবশ্যই পেয়ারা গাছে যে সকল মরা রোগ আক্রান্ত চিকন ডালপালা রয়েছে সেগুলো নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে।এ ছাড়া আরো কোন বড় সমস্যা দেখা দিলে কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে সুস্থ ব্যবস্থা নিতে হবে।
থাই পেয়ারার ফল সংগ্রহ
গাছ যত বৃদ্ধি হবে সাথে সাথে ফলন তত বেশি হতে থাকে।এজন্য থাই পেয়ারা চাষ সম্পর্কে জেনে বুঝে করলেই ফলন ভালো হবে।একটি চারা গাছের বয়স যখন ৫ থেকে ৬ মাস হবে তখন সেই গাছে একটি ফুল আসবে সেই ফুলটি ভেঙে দিতে হবে।
পরবর্তী সময় ৮ থেকে ৯ মাস বয়সে যখন গাছে ফুলটা আসবে তখন সেই ফুলটি রেখে দিতে হবে।ফুলটি রেখে দেওয়ার পরে তিন থেকে চার মাস পর যখন ফল আসবে তখন ফলটি সংগ্রহ করতে হবে।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
বর্তমানে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এই থাই পেয়ারা ফলের চাষ করা হয়ে থাকে। পেয়ারা কে পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া অনেক দুষ্কর।কারণ পেয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সহজলভ্য ফল।তাছাড়া পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ও প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ থাকে যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন।
এইসব প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ পেয়ারা পাকা এবং কাঁচা দুই সময় পাওয়া যায়।এই পেয়ারার ভিটামিনের ভরপুর যার ফলে আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে,রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, পরিপাকে কার্যকারিতা করে,চোখের জ্যোতি বাড়ায়,দাঁতের ব্যথা দূর করে, ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে ইত্যাদি।আশা করি সবাই পেয়ারার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
থাই পেয়ারা গাছের চারা যেখানে পাওয়া যাবে
বিভিন্ন ব্রাক নার্সারি বেসরকারি নার্সারি এবং আমাদের বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কিছু সম্প্রসারণ সরকারি অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে থাই পেয়ারা গাছের চারা পাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্য
পেয়ারা চাষ করে কিভাবে অতি সহজে আপনি স্বাবলম্বী হতে পারবেন, থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম,এবং থাই পেয়ারা গাছের রোগ দমন করা সে বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলে লেখা হয়েছে।এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।
তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন যাতে তারা উপকৃত হয় এবং চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারে।থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করব।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url