পালং শাক খাওয়ার বিশেষ ১০টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

এক রাতেই মুখের ব্রণ দূর করার বিশেষ উপায় প্রিয় বন্ধুগণ আজকে আপনাদেরকে জানাবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং পালং শাকে কি এলার্জি আছে কিনা সে সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন।
পালং শাক খাওয়ার বিশেষ ১০টি  উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
পালং শাক মূলত শীতকালীন সবজি হলেও এখন বছরে অন্যান্য সময়ও এর চাষ হয়।পুষ্টিগুণে ভরপুর এই পালং শাক শরীরের জন্য দারুন উপকারী।পালংশাকের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ( Spinacia Oleracea)।
সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

জনপ্রিয় এই পালং শাকটি দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের শীতকালে স্টার সব থেকে বেশি হয়ে থাকে। পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর ও রুচিকর শাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট।
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানেন না পালং শাকের উপকারিতা। তাই আজকে আপনাদেরকে জানাবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং পালং শাকে কি এলার্জি আছে ,পালং শাকের পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে।

পালং শাকের পুষ্টিগুণ

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে পালং শাক শরীরের দৈনিক ফাইবার চাহিদা ২০% করে পূরণ করে। পাশাপাশি ভিটামিন ও প্রোটিনে ভরপুর এই পালং শাক। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে রয়েছে
  • ২.৮ গ্রাম ফাইবার।
  • ১১.২ মিলিগ্রাম আয়রন।
  • ২.০ গ্রাম প্রোটিন।
  • ২.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
  • ২০.৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
  • ৭৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • ২০৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
  • ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন।
  • ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
  • ৯৩০০ ভিটামিন এ আই.ইউ।
  • ০.০৮ মিলিগ্রাম রিবোফ্লোবিন।
তাছাড়া আরো রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফলিক এসিড ও সেলিনিয়াম। একজন মানুষ পরিপূর্ণ সুস্থ থাকার জন্য যে সকল ভিটামিন গুলি প্রয়োজন সব গুলো পালং শাকে রয়েছে।

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম

সাধারণত শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে লুইটেন থাকে।তবে সবচাইতে বেশি থাকে পালং শাকে। অনেক গবেষণার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে পালংশাক বিভিন্ন তাপমাত্রায় ভেজে সিদ্ধ ও ভাব দিয়ে রান্না করার ফলে অনেক পুষ্টি উপাদানসহ লুইটেন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন রান্না না করে পালংশাক খেতে। জুস তৈরি করে অথবা সালাদের মাধ্যমে খেতে বলেছে।এই খাবারের সাথে যদি দুধ অথবা দই যোগ করে নেন তাহলে খাবারটা আর পুষ্টিকর হয়ে উঠবে।

পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

পালং শাক খেতে যে রকম মজা এবং সুস্বাদু তেমনি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার। এই পালং শাকের মধ্যে রয়েছে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টি উপাদান।বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা অবশ্যই পালং শাক রাখবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

পেসির ক্ষমতা বাড়ায়ঃ পালং শাকের মধ্যে থাকা নানা এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের হার্টের পেশীর ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সারা শরীর জুড়ে যে সকল হার রয়েছে সবগুলো হাড়ের পেসিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করেঃ পালং শাকির হয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন,জ্যান্থিন,লুটেইন যা আমাদের চোখের রেটিনার ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।তাছাড়া পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ ড্রাই আইয় এবং আই আলসারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পালং শাকির হয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড রয়েছে।যা মেটাবলিজম রেট বাড়ানোর মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরে হজম ক্ষমতার উন্নতি করে।

মুখের ব্রণ কমেঃ অল্প পরিমাণে পানির সঙ্গে পালং শাক মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।তারপর সেই পেস্টটি মিনিমাম ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন।তারপর নরমাল পানি দিয়ে সম্পূর্ণ মুখটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। প্রতিদিন এই রূপচর্চাটি করলে মুখের ব্রনের ভিতরে থাকা ক্ষতিকর উপাদান গুলো বেরিয়ে যাবে। এবং অতি দ্রুত মুখের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিঃ পালং শাকে থাকা পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফলেট সমৃদ্ধ এই শাকটি যদি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখেন তাহলে মস্তিষ্কের শক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও খনিজ সমৃদ্ধ হিসাবটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের মধ্যে সোডিয়াম ও লবনের হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। পালং শাকে থাকা ফলেট ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ কাজ করে।

মাথার চুল পড়ার হার কমে যায়ঃ যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ছে অথবা চুলের সমস্যায় ভুগছেন। তারা প্রতিদিন খাবার তালিকা পালং শাক রাখতে পারেন অথবা পালং শাকের হেয়ার প্যাক লাগাতে পারেন। কারণ পালং শাকে থাকা আয়রন চুল পড়ার মাত্রা কমানোর পাশাপাশি লোহিত রক্তের কণিকা ঘাটতি পূরণ করে।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।

ওজন কমাতেঃ যদি আপনার শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তায় থাকেন তাহলে আপনার চিন্তামুক্তর জন্য প্রতিদিন পালং শাক খেতে পারে। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকের মধ্যে ক্যালরি রয়েছে মাত্র ৭ কিলোক্যালোরি যার ফলে আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ পুষ্টিগুণে ভরপুর পালং শাকে রয়েছে ১০টির বেশি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড যা আমাদের শরীরের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। যার ফলে আমাদের শরীরের পলিনিউট্রিয়েন্টস গুলো দেহের ফ্রী রেডিকেলকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

যদি আপনি পালং শাকটি রান্না করে খেতে না চান।অথবা চুলের পরিচর্যা করতে হেয়ার প্যাক না লাগাতে চান তাহলে নিয়মিত পালং শাকের রস খেতে পারেন। কারণ পালং শাকের রস বানিয়ে খেলেও সমান উপকার পাবেন। আশা করি পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক পালং শাকে কি আলার্জি আছে কিনা সেই সম্পর্কে।

পালং শাকে কি এলার্জি আছে

বর্তমানে অনেক মানুষেরই এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে। তবে সবারই একই জিনিসে বা একই খাবারের এলার্জি থাকে না। প্রতিটা মানুষেরই ভিন্ন ভিন্ন জিনিসে বা ভিন্ন ভিন্ন খাবারে এলার্জি হয়ে থাকে।বিশেষজ্ঞদের মতে পালং শাকেও এলার্জি রয়েছে।পালং শাক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
তবে যাদের পালংসাকে এলার্জি হয় তাদের এড়িয়ে চলাই উচিত। আপনি যদি পালং শাক খাওয়ার পরে শ্বাসকষ্ট হয়, চোখ চুলকানি শুরু করে, শরীর চুলকানি শুরু করে অথবা নাক বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি অন্য কোন সমস্যা হয়।তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পালং শাক খাবেন।

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি নারীর পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অতি জরুরী। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ফল শাকসবজি খাওয়া উচিত। যেহেতু পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রন সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে।যার ফলে গর্ভবতী নারী ও পেটে থাকা শিশু সঠিক পুষ্টি পায় ।

তাই গর্ভাবস্থায় পুষ্টিবিদরা পালং শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রতিটি নারীর গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া উচিত নয়। কেননা অনেক নারীরে পালংশাকে এলার্জি থাকে।তাই গর্ভাবস্থায় যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত নিয়ে তারপর খাবেন।

পালং শাকের রেসিপি

আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। আমাদের নিয়মিত প্রতিদিন শাকসবজি খাদ্য তালিকা রাখা উচিত। শীতকালীন সবজি পালং শাক আমাদের অতীত পছন্দের একটি খাদ্য। তাই এখন পালং শাক দিয়ে কি কি রান্না করে খেতে পারবেন পালং শাকের রেসিপি সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো।
  • আপনি চাইলে পালং শাক ভাজি করে খেতে পারেন।
  • পালং শাক ও মিষ্টি কুমড়া দিয়ে রুই মাছের ঝোল রান্না করতে পারেন।
  • মটরশুঁটি দিয়ে পালংশাক ভাজি করতে পারেন।
  • টাকি মাছ দিয়ে পালং শাকের ঝোল রান্না করতে পারেন।
  • কিছু পরিমাণ পাবদা মাছের সঙ্গে পালং শাক রান্না করতে পারেন।
  • পালং শাকের সুপ তৈরি করতে পারেন।
  • পালং শাক দিয়ে জুস তৈরি করতে পারেন।
  • চিংড়ি মাছ দিয়ে পালং শাক ভাজি করতে পারেন।
আপনি চাইলে এই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যুক্ত পালং শাক অনেক কিছুর সাথে রান্না করতে পারেন।উপরে উল্লেখিত যেগুলো রেসিপি বলা হয়েছে এগুলো আপনি চাইলে ইউটিউবে সার্চ করে দেখতে পারেন।এই সকল রেসিপি যদি সঠিক নিয়ম কানুন মেনে রান্না করেন অবশ্যই আপনার পরিবারের সদস্যরা খাবারটি চেটেপুটে খাবে।

পালং শাকের অপকারিতা

এতক্ষণ পোস্টি পরে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে পালং শাক একটি পুষ্টিকর সবজি। পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী করে না কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধার কারণও হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত ও সচেতন থাকতে হবে।তাহলে এবার পালং শাকের অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক।

এলার্জিঃ আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষেরই পালং শাকে এলার্জি আছে। পালং শাক খাওয়ার ফলে যদি আপনার শরীরে কোন প্রকার চুলকানি প্রভাব দেখতে পারেন।তাহলে অবশ্যই পালং শাক খাওয়া বন্ধ করে দিবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

কীটনাশকঃ পালং শাক চাষ করার সময় প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের মানবদেহে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হতে পারে। এর জন্য পালং শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোমতো ধুয়ে নিতে হবে।

নাইট্রেট উপাদানঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট রয়েছে যা শরীরের নাইট্রাইটে রূপান্তরিত করতে পারে।যার ফলে আমাদের শরীরের কিছু পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে যৌগ তৈরি করতে পারে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।এর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক খাওয়া উচিত নয়।

অক্সালেটসঃ বিশেষজ্ঞদের মতে পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট,যা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের সাথে আবদ্ধ হতে পারে।যার ফলে আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শেষ কথা

সবার ইচ্ছা থাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য। আপনি চাইলে নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন। এতে আপনার শরীরের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন প্রবেশ করবে। তবে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার পালং শাকে এলার্জি আছে কিনা সে সম্পর্কে জেনে নিবেন।

যদি আপনার পালং শাকিয়া রাজি থাকে তাহলে এড়িয়ে চলাই উত্তম। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন। তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url