নাক ডাকা বন্ধ করার বিশেষ উপায় ও দোয়া
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির উপায় জানুন
বর্তমানে আমাদের অতি পরিচিত একটি সমস্যা হচ্ছে নাক ডাকা।তাই আজকের আর্টিকেলে
আপনাদেরকে জানাবো নাক ডাকার কারণ, নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে।
নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে
হবে।সাধারণত আমাদের নাক ডাকা শুরু হয় শ্বাস নেওয়ার সময় কোন প্রকার বাধা
পড়লে।আমাদের অনেকেরই নাক ডাকার সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য এই
আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনার কাজে আসবে।
সূচিপত্রঃ নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়
ভূমিকা
নারী-পুরুষ ছোট-বড় প্রায় অনেকেই নাক ডাকা সমস্যায় ভুগছেন।নাক ডাকার সমস্যাটি
অতি বিরক্তকর একটি সমস্যা।নাক ডাকার সমস্যা নিয়ে মানুষজন হাসি ঠাট্টা করে তবে
যে নাক ডাকছে হতে পারে সে কোন শারীরিক সমস্যার কারণে নাক ডাকছে।
আরো পড়ুনঃ ওজন বাড়ানো বা Weight Gain করার সহজ উপায়
তাই হাসি ঠাট্টা না করে নাক ডাকার সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে
সম্পর্কে জানতে হবে।নাক ডাকার কারণ ও নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় এবং নাক ডাকা
বন্ধ করার দোয়া সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নাক ডাকার কারণ
নাক ডাকার মূলত কারণ হচ্ছে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসা বা শ্বাস নেওয়ার জন্য
হাঁসফাঁস করার ফলে নাক ডাকার শব্দ শোনা যায়।শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া যদি
স্বাভাবিক না থাকে তাহলে নাক থেকে অদ্ভুত শব্দ বের হয়। এছাড়া আমাদের শারীরিক
কিছু সমস্যার কারণে ও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে যেমন
শরীর অতিরিক্ত ওজন
যাদের শরীর অতিরিক্ত ওজন তাদের ক্ষেত্রে নাক ডাকার সমস্যা একটু বেশি হয়ে থাকে।
কারণ নাক ডাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন।শরীরে অতিরিক্ত ওজন হওয়ার ফলে
আমাদের আস্তে আস্তে পেশি দুর্বল হতে থাকে এবং আমাদের পেশির উপরে জমির ফ্যাটের
আস্তরণ।এর জন্য অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদের নাকের ডাকার সমস্যা হয় বেশি।
ধূমপানের অভ্যাস
যারা নিয়মিত অতিরিক্ত ধূমপান করে তাদের নার্ভগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। সারাদিন
ধূমপান করার পর রাতে ঘুমানোর সময় শরীর দুর্বল থাকার কারণে নাক ডাকার সমস্যা
হতে পারে।
ঘুমের ঘাটতি
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের যতটুকু ঘুমের প্রয়োজন যদি সে ততটুকু না ঘুমায়
এবং সারাদিন কাজে থাকে এবং রাতে ঘুম ঠিকঠাক মত হয় না।এবং শেষ রাতে ঘুমানোর
সময় তার নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।
চিৎ বা উল্টো হয়ে ঘুমালে
উল্টা হয়ে ঘুমানোর ফলে রাতের বেলা শ্বাসনালীর টিস্যুকে নিচের দিকে টানতে থাকে।
যার শাসনের রাস্তা কে সংকীর্ণ করে ফেলে। যার ফলে সে সারারাত উল্টো হয়ে বা চিৎ
হয়ে ঘুমানোর কারণে নাক ডাকার সমস্যা হয়।
বৃদ্ধ হওয়ার কারণে
অনেক সময় বয়স্ক মানুষদের নাক ডাকার সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ বয়স বৃদ্ধির
কারণে দিন দিন কণ্ঠনালী ও শ্বাসনালী চিকন হতে থাকে। যার ফলে রাতে ঘুমানোর সময়
নাক ডাকার সমস্যা হয়।
সাইনাস
অনেক মানুষের দেখা দেয় পলিপের সমস্যা বা সাইনাস হলে নাক ডাকার মত বিরক্তকর
সমস্যা দেখা দেয়।তাই এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
রাতের জ্বর
যাদের রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে জ্বর আসে তাদের নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং নাকের
ভিতর অদ্ভুত শব্দ তৈরি হয়।তাই মাঝে মাঝে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার রাতের বেলা
জ্বর আসে কিনা।
নাকের ভেতরের মাংস বেড়ে গেলে
আমাদের অনেক ঠান্ডা জনিত কারণে অথবা অন্যান্য সমস্যার কারণে নাকের ভেতরের মাংস
বেড়ে যায়। আর নাকের ভেতরের মাংস বেড়ে গেলে নাকের শ্বাসনালী ছোট হয়ে যায়।
যার ফলে শ্বাস নেওয়ার সময় বাধা সৃষ্টি করে তখন মানুষ নাক ডাকে।
আশা করি সবাই নাক ডাকার কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাহলে চলুন এখন জেনে
নেওয়া যাক নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়।
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়
নাক ডাকা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় তবে কিছু কিছু নাক ডাকা আছে যেগুলো মানুষকে
বিরক্ত করে। মানুষ সাধারণত নাক ডাকা শুরু করে যখন তার শ্বাসনালীতে বাধা
পড়ে।চলুন জেনে নেওয়া যাক নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে।
গরম পানির ভাপ নেওয়া
ঘুমানোর সময় নাক ডাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে রক্ত জমাট। আমাদের নাসিকা পথে রক্ত
জমাট বেঁধে থাকার কারণে আমাদের ঘুমের সময় নাক ডাকা শুরু হয়।নাসিকা পথে রক্ত
জমার কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা সৃষ্টি করে।আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের
প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন গরম পানির ভাপ নিতে হবে। গরম পানির ভাবনার
ফলে আমাদের শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়।
ধূমপান
আমাদের নাকের ভিতর এবং গলায় মেমব্রেন টিস্যুর ক্ষতি করার অন্যতম কারণ হচ্ছে
ধূমপান। ধূমপানের কারণে আমাদের শ্বাসনালীতে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়।ধূমপান
ছাড়তে পারলে শ্বাস প্রশ্বাসের বাধা দূর হবে ফলে নাক ডাকার প্রবণতা কমে
যাবে।নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং নাক ডাকা বন্ধ করতে ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন এক পাশে হয়ে ঘুমান
এক পাশ হয়ে না ঘুমানোর ফলে নাক ডাকা শুরু হতে পারে।কারণ পিঠের উপর ভর দিয়ে
ঘুমালে মুখের ভিতরের জিব্বা গলার পিছনে চলে যেতে পারে। এর ফলে গলার মধ্যে
বায়ুপ্রবাহের বাধা হতে পারে। এবং আমাদের নাক ডাকা শুরু হতে পারে। তাই আমরা
চেষ্টা করব প্রতিদিন এক পাশ হয়ে ঘুমানোর ফলে আমাদের নাক ডাকা কমে যাবে।
নাক পরিষ্কার রাখা
ঠান্ডা জনিত কারণে ঘুমানোর সময় নাক ডাকা হতে পারে।এর জন্য মাঝে মাঝে গরম পানির
ভাব নিতে হবে এবং দুই আঙ্গুলের সাথে সরিষার তেল মাখিয়ে নাকের মধ্যে জমে থাকা
ময়লা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। তাহলে ঘুমের সময় নাক ডাকা কিছুটা কমে যাবে।
অতিরিক্ত ওজন
শরীরে অতিরিক্ত ওজন হলেও ঘুমানোর সময় নাক ডাকার মত সমস্যা দেখা দিতে
পারে।আপনাদের ওজন যত বেশি হবে নাক ডাকটা আকাঙ্ক্ষা তত বেশি হবে।শরীরের ওজন
স্বাভাবিক থাকলে নাক ডাকার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানোর কারণেও নাক ডাকা হতে পারে।তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত
পরিমাণে ঘুমাতে হবে। নির্দিষ্ট একটি সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং দেশে সময় ঘুম থেকে
উঠার অভ্যাস করতে হবে। এতে নাক ডাকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমে যাবে।
মাথা উঁচু করে ঘুমানো
নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য বিছানা থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে বালিশ নিয়ে ঘুমালে
নাক ডাকা কম হয়। শরীর থেকে মাথা কিছুটা উঁচুতে থাকলে শ্বাস নেওয়ার সহজ হয়।
তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মাথার নিচে দুটি বালিশ নিবেন অথবা একটি উঁচু বালিশ
নিবেন। দেখবেন আপনার নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
আশা করি সবাই নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। মূলত আপনার
শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলে আপনার নাক ডাকা অভ্যাস হবে না।
এখন জেনে নেওয়া যাক নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া সম্পর্কে।
নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া
নাক ডাকা বন্ধ হওয়ার দোয়া একবার পড়ুন ইনশাল্লাহ আপনার নাক ডাকা বন্ধ হয়ে
যাবে। দুনিয়ার সমস্ত সমস্যার সমাধানের এবং সব ধরনের অসুস্থতা থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য কোরআনে আমল রয়েছে।নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়াটি হল
বাংলা উচ্চারণঃ
আউযুবি কালিমাতিল্লাহি তায়াম্মাতি মিন শাররি মা খালাখ।
আমল করার নিয়ম
ওযু অবস্থায় দোয়াটি পড়ে ডানপাশ হয়ে ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন সকালে সাতবার,
সন্ধ্যায় সাতবার এবং ঘুমানোর আগে একবার পরে ঘুমাবেন। ইনশাল্লাহ আমাদের নাক
ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
নাক ডাকা বন্ধ করার ব্যায়াম
যাদের অনেক নাক ডাকার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে নিয়ে আমেরিকার একটি কলেজ কেনটাকি
কলেজ অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি
ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো করলে নাক ডাকার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। চলুন জেনে
নেওয়া যাক নাক ডাকা বন্ধ করার ব্যায়াম সম্পর্কে।
- মুখের ভিতরে জিব্বা টাকে উপরের মারির/তালুর সাথে চাপ দিয়ে রাখতে হবে।এবং কিছুক্ষণ পর পর উপরের দিকে ঠেলার চেষ্টা করতে হবে।
- জিব্বার মাথা মুখের ভিতরের নিচ বরাবর দিকে রাখতে হবে এবং জিব্বার পিছনের অংশ দিয়ে মুখে নিচের দিকে চাপ দিতে হবে।অর্থাৎ জিব্বার আগা সামনের দাঁতে লেগে থাকতে হবে।
- স্বাভাবিকভাবে যতটা সম্ভব বড় করে হা করা এবং ধীরে ধীরে মুক্তি বন্ধ করতে হবে। এইভাবে কয়েকবার ব্যায়াম করলে নাক ডাকা বন্ধ হতে পারে।
- মাঝে মাঝে মুখের ভেতরের জিব্বা বাইরে বের করে ঠোটের নিচে থুতনি ছোয়ার চেষ্টা করা।
এই ব্যায়ামগুলো আপনি নিয়মিত করলে অবশ্যই আপনার নাক ডাকা অনেকটাই কমে যাবে।যদি
নিজে নিজে না করতে পারেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক অথবা ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাহায্য
নিতে পারেন।
নাক ডাকা বন্ধ করার ক্লিপ
বর্তমানে ডিজিটাল যুগে নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে তার মধ্যে
অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে এন্টি স্নোরিং ডিভাইস (Anti Snoring Device) নাক ডাকা
বন্ধ করার ক্লিপ। ঘুমানোর সময় এই ক্লিপ ব্যবহার করার ফলে স্লিপিং এ্যাপনিয়া
দূর করে।এই ডিভাইস টি ব্যবহার করার ফলে আপনার নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যেতে
পারে।খুবই হালকা এবং ব্যবহার করা খুবই সহজ।
লেখকের মন্তব্য
নাক ডাকা অতি স্বাভাবিক বিষয় তবে যে নাক ডাকে সে তেমন কিছু বুঝতে পারে না
কিন্তু পাশের মানুষজন খুবই বিরক্ত বোধ করে। আশা করি নাক ডাকার কারণ, নাক ডাকা
বন্ধ করার উপায়, এবং নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া সহ সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।
আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করবেন যাতে তারা উপকৃত হয়। নাক ডাকা বন্ধ করার বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে
অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এতক্ষণ ভার্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url