প্রাকৃতিক ভাবে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় জানুন

মুখের ব্রণ দূর করার বিশেষ উপায় জানুন মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কে না চায়? সৌন্দর্যের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। একজন মানুষ ফর্সা ও কালো হলেও তারা নিজেদের মতোই সুন্দর। তারপরও মুখে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সকলেই যায়।
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
তাই আজকের পোস্টে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবার, কি খাবার খেলে ভিতরে ত্বক ফর্সা হয় সহ আরো নানা বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তাই মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন।
সূচিপত্রঃ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

ভূমিকা

উজ্জ্বল, মসৃন ও দাগ হীন ত্বক আমাদের সকলেরই পছন্দের। কিন্তু এরকম উজ্জ্বল, মসৃণ ও দাগ হীন ত্বক কয়জনেরই বা হয়। অনিয়ন্ত্রণ জীবনযাপন, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের চাপ, মানসিক দুশ্চিন্তা, অপরিষ্কার ত্বক ইত্যাদির কারণে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। এরকম সমস্যা সকল বয়সের মানুষের হয়ে থাকে।
তাই আমাদের অনেকেরই ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যায়।এই রুক্ষ শুষ্ক ত্বককে ঠিক করার জন্য আমরা বাহির থেকে বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করে। এতে করে আমাদের ত্বক আরো বেশি খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া উপায়ের উপর আর কোন উপায় নেই। তাই মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় জানতে নিচের অংশ পড়ুন।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় অনেক রয়েছে। আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায় এর মাধ্যমে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন অথবা বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করেও মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। তবে ঘরোয়া উপায় এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে পারবেন।চলুন তাহলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানা যায়।

টমেটো ও মধুঃ ঘরোয়া উপায় মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে টমেটো ও মধু একটি কার্যকরী উপাদান। প্রথমেই একটি টমেটো নিতে হবে। টমেটো পরিষ্কার করে ধুয়ে এর মাঝখান দিয়ে দুই টুকরো করতে হবে। তারপর কিছুটা মধু নিয়ে টমেটো ও মধু একসাথে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট করতে পারেন। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের ত্বককে কোমল ও ভিতর থেকে ফর্সা করে।

লেবু ও চিনিঃ সপ্তাহে তিনবার লেবু ও চিনি ব্যবহার করলে আপনার মুখে ডেড সেল দূর হবে এবং ত্বক ফর্সা হবে। প্রথমে একটি ছোট লেবু নিতে হবে। লেবুর কিছুটা অংশ নিয়ে এতে চিনি দিয়ে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে। এটি আপনি ৫ থেকে ১০ মিনিট করতে পারেন।

আলু ও মধুঃ আলু ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক ভিতর থেকে ফর্সা হবে। প্রথমে একটি ছোট আলু নিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর আলু মেস করে এতে কিছু পরিমাণ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন ও মধুঃ ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা করতে নিয়মিত বেসন ও মধু পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ বেসন নিয়ে এসে কিছু পরিমাণ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর আপনার মত কে ভালো করে পরিষ্কার করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে রাখবেন। এরপর নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

হলুদঃ হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। হলুদ ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা হবে এবং ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর করবে। হলুদ আপনি ব্লেন্ড করেও ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া উপরোক্ত যেকোনো উপাদানের সাথে আপনি হলুদ ব্যবহার করতে পারবেন।

মসুর ডালঃ প্রথমে এক টেবিল চামচ মসুর ডাল কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর আপনি চাইলে সরাসরি এটি ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া এর সাথে মধু বা বেসন মিশেও ব্যবহার করতে পারবেন। এই পেস্ট আপনি ১৫ থেকে ২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন। এরপর নরমাল পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

কলাঃ কলা আমাদের ত্বকে ফর্সা করে। আপনি চাইলে কলা পেস্ট করে সরাসরি মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাছাড়া কলার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে ১৫ থেকে ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

শসাঃ শসা ব্যবহার করে মুখের কালো দাগ সহজে দূর করা যায়। প্রথমে কিছুটা পরিমাণ শশা নিয়ে এতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ব্লেন্ড করা পেষ্ট আপনার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার মুখে কালো দাগ দূর হবে এবং বয়সের ছাপ দূর করবে।

টক দইঃ টক দ‌ই আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। টক দই আমাদের ত্বকে থাকা অপ্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এবং ব্রণ জাতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা করে। টক দই আপনি সরাসরি আপনার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন।

অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা ব্যবহার করার ফলে আমাদের ত্বকে কুচকানো ভাব দূর হবে। তাছাড়া রোদে পোড়া কালো দাগ ও ব্রণের দাগও দূর হবে। অ্যালোভেরা জেল আপনি রাতে টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। ঘুমানোর আগে এলোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

উপরোক্ত নিয়ম মেনে আপনি মুখের উজ্জ্বলতা সহজে বৃদ্ধি করতে পারবেন। নিয়মিত এই সকল ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলুন এতে করে আপনার ত্বক ফর্সা হবে। আশা করি মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবার

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে আমরা নানান ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করি। এ সকল কসমেটিকস আমাদের ত্বকের সুন্দর করার চেয়ে আরো খারাপ করে দেয়। তাছাড়া আমাদের অনিয়ন্ত্রণ জীবন যাপন ও খাদ্যাভাস ঠিক রাখতে না পারার কারণেও আমাদের ত্বকে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
তাই মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কসমেটিকস ও নানান উপায় এর চেয়ে বেশি কার্যকর হবে যদি আপনি সঠিক খাদ্য গ্রহণ করেন। এবং নিয়ন্ত্রণ জীবনযাপন করে দিতে পারে আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার ও পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্য যেমন ভাল রাখবে তেমনি আপনার ত্বক কেও সুন্দর করবে। চলুন তাহলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবার সম্পর্কে জানা যাক।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সকল পুষ্টিকর খাবার আমাদের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করবে। প্রাকৃতিক ভাবে ত্বককে সুন্দর করার জন্য আপনাকে দিনে পাঁচ থেকে ছয় গ্লাস পানি পান করতে হবে। পানি আমাদের ত্বককে মসৃণ করে। শরীর অতিরিক্ত ডিহাইডেট হওয়া থেকে মুক্ত করে।

নিয়মিত সঠিক পরিমাণ পানি পান করার ফলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা যায় না। ত্বকে উজ্জ্বল করার জন্য আমাদের সবুজ শাকসবজি খেতে হবে যেমন গাজর, টমেটো, বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক, সতেজ ফলমূল ইত্যাদি। বিভিন্ন ফল মূলের মধ্যে রয়েছে কলা, কমলা, আপেল ,আঙ্গুর ইত্যাদি। নিয়মিত ফলমূল খাওয়ার কারণে আপনার ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হবে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখবে।

তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খেতে পারেন। এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন নাশপাতি, বাদাম ও মটরশুটি খেলেও আপনার ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল হবে।

শীতকালে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

শীতকালে আমাদের ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যায়। তখন ত্বকের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয়। অনেকের শীতকালে ত্বকের যত্ন না করার কারণে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় না। মুখের ত্বক খসখসে হয়ে পড়ে। তাই শীতকালে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেল আমাদের শরীরে ত্বককে রুক্ষ শুষ্ক হতে বাধা দেয়। তাই আপনি প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বক খসখসে হয়ে থাকবে না।

মধুঃ মধু আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শীতকালে ফেসপ্যাক হিসেবে মধু ব্যবহার করতে পারেন। কিছুক্ষণ মধু তোকে লাগিয়ে গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।
দুধ বা ওটমিল: শীতকালে ত্বকের রুক্ষ শুষ্কতা কমাতে দুধ বা ওটমিলের স্বর ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের আলাদা একটি উজ্জ্বলতা দেখা যাবে।

বাদামের তেলঃ শীতকালের আর্দ্র বাতাসে আমাদের ত্বক সহজেই রুক্ষ শুষ্ক হয়ে পড়ে। এই রেখো সুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে ও ত্বকের টানটান ভাব আনতে বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন।

পেঁপেঃ আমাদের ত্বকের অনেক সময় রোদে পোড়া দাগ হয়ে যায়। এই রোদে পোড়া দাগ কমাতে আপনি পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে কিছুটা পরিমাণ পেঁপে নিয়ে এর পেস্ট বানিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

কলাঃ ত্বকের যত্নে কলা খুবই উপকারী। তাই আপনি প্রতিদিন কিছুটা কলার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। কলার পেস্ট ব্যবহার করার কারণে আপনার ত্বকের ভেতর থেকে ডেট সেল সরে যাবে এবং নতুন করে সেল তৈরি হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে আপনি শীতকালে ত্বকের যত্ন করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকে আলাদা একটি সুন্দর্য ভেসে উঠবে। অবশ্যই শীতের আবহাওয়ার ত্বকের যত্ন একটু বেশি করবেন।

শেষ কথা

আশা করি সবাই মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।মানুষের শরীরের মধ্যে মুখের যত্নটা সবাই একটু বেশি নিতে চায়।তাই মুখের যত্ন নিতে হলে বা মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চাইলে অবশ্যই প্রাকৃতিক উপায়ে চেষ্টা করবেন মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য।

প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট এর সাইডএফেক্ট থাকে। তাই চেষ্টা করবেন বাইরের কোন প্রকার ক্রিম ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে।এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যারা তারা উপকৃত হয়। মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url