সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় টমেটো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি।সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও টমেটো মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেল আলোচনা করবো।টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছর পাওয়া যায়।

সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে পাকা টমেটো খেলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।সারা দেশে টমেটোর চাহিদা খুব বেশি।কারন টমেটো ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ সবজি।
সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখে টমেটো।খাবারে বাড়তি স্বাদ বাড়াতে পারে টমেটো। তাই এই পোস্টে সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা,টমেটো মুখে মাখার উপকারিতা এবং ওজন কমাতে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব।

টমেটোর পুষ্টিগুণ

টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, লাইকোপিন ও ভিটামিন কে সহ কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো রান্না করার পরেও টমেটোর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।তা হলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে কত পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে।
  • পানি ৮৫%।
  • খনিজ লবন।
  • ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম।
  • ভিটামিন (C) সি ২৭ মিলিগ্রাম।
  • লৌহ ০.৪০ মিলিগ্রাম।
  • ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম।
  • থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম।
  • রিবোফ্লাভিন ০.৬ মিলিগ্রাম।
  • ক্যারোটিন ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম।
  • দ্রবণীয় প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।

সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে টমেটো খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি হজম শক্তিও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।তাহলে বুঝতেই পেরেছেন সকালে খালি পেটে টমেটো উপকারিতা কতটুকু বেশি।এবার জেনে নেয়া যাক টমেটো খেলে আপনার শরীরে কি কি উন্নতি হবে।একটি নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম হলে অনেকেই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়।
ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খাদ্য তালিক একটা মোটর রাখতে পারেন।কারণ টমেটো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করে।যারা অনেকদিন যাবত হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য টমেটো খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।টমেটো আর্থাইটিস ও হারের জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিষেধকের মতো কাজ করে থাকে।

টমেটো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণগুলোর মধ্যে বিশেষ গুণ হলো এটি আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে তারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে পারেন।দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া,দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া,দাঁত ব্যথা ও দাঁতের ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়ার বিকল্প নেই।

বর্তমানে অতি পরিচিত একটি সমস্যা হল উচ্চ রক্তচাপ। এই সমস্যা রয়েছে তারা সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন করতে পারেন।কারণ টমেটোতে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে সেগুলো আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত সাহায্য করে।দেহের ভিতরে ক্ষতিকর উপাদান গুলো বের করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে টমেটো।

কেননা অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ইনফ্লামেটরি রয়েছে টমেটোতে।যারা কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন। তাদের এই সমস্যা-নিমেষে দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা টমেটো।কারণ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আমাদের সুস্থ রাখে।

টমেটো মুখে মাখার উপকারিতা

বর্তমানে রূপচর্চা করেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না।নিজের মুখের স্কিন ভালো রাখতে সবাই চায়।পরিষ্কার ও মসৃণ ত্বক পেতে ব্যবহার করতে পারেন টমেটো।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,ও পটাসিয়াম যা আমাদের উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে।তা হলে চলুন টমেটো মুখে মাখার উপকারিতা জেনে নিই।

  • মুখে রোদের পোড়া ত্বকের ক্ষতিকর প্রভাব দূর করে টমেটো।বাদাম ও দুধের সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন।কিছুক্ষন পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকের পুরা ভাব দূর হয়ে গেছে।
  • রোমকূপ বড় হয়ে গেছে ফলে ত্বকে সহজে ময়লা ও জীবাণু প্রবেশ করে।এর ফলে মুখে ব্রণ হয়।এক টেবিল চামচ টমেটোর রস ও সাথে ৫ থেকে ৭ ফোটা লেবুর রস নিন। তারপর তুলার সাহায্যে মুখে ম্যাসেজ করুন।১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার মুখে আর ব্রণ হবে না।
  • কাঁচা টমেটো রস ৫ থেকে ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে নরমাল পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার ভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের তেল ভাব দূর হবে এবং ত্বক মসৃণ হবে।
  • শসার রস ও এক টেবিল চামচ টমেটোর রস ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এতে মুখে উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
  • উজ্জ্বল ত্বকের জন্য টমেটো রসের সাথে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন।
  • চিনির সাথে অর্ধেক টমেটো কেটে নিন।তারপর চিনিযুক্ত টমেটো টি মুখে ভালোমতো ঘুষতে হবে।এতে ত্বকের মরা চামড়া উঠে তাক উজ্জ্বল হবে।
ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য এই টিপস গুলো ব্যবহার করুন।আশা করি অনেক উপকৃত হবেন। তবে অবশ্যই টমেটোতে আপনার এলার্জি আছে কিনা তা জেনে নিবেন।

অতিরিক্ত টমেটো খেলে কি গ্যাস হয়?

টমেটো অতি সুস্বাদু এবং অতি পরিচিত আমাদের একটি সবজি। টমেটো অতি সুস্বাদু বলে তাই না যে অতিরিক্ত খেতে হবে। মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অতিরিক্ত টমেটো খেলে হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। টমেটোতে ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড রয়েছে যার পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড তৈরি করে। তাই অতিরিক্ত টমেটো খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।

টমেটো খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

টমেটো খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকাল বেলা।খালি পেটে সকালে টমেটো খেলে এটি এসিডিটি দূর করে পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।তবে মনে রাখবেন দুপুর বেলা যদি টমেটো খান তাহলে ওজন কমাতে এবং ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করবে। আপনারা চাইলে রাত্রেবেলা টমেটো খেতে পারেন। কারণ রাতের বেলা টমেটো এলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
এখন জান টমেটো খাওয়ার নিয়ম।টমেটো খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো মেনে খেলে সর্বোচ্চ পুষ্টি লাভ করতে পারবেন।ফসলে নানা কারণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেহেতু টমেটো প্রথমে সংগ্রহ করার সাথে সাথে ভালোমতো ধুয়ে নিতে হবে।সেটি ভালোমতো কেটে লবণযুক্ত করে খেতে পারেন।

লবণ যুক্ত করার কারণ হচ্ছে টমেটোতে থাকা লাইকোপিন শোষণে করতে সাহায্য করে লবণ। তাছাড়া তরকারির ভেতরের সবজি হিসেবে টমেটো দিয়ে খেতে পারেন।আবার টমেটোর সস বানিয়েও খেতে পারেন। ইউটিউবে সার্চ করলে দেখতে পারবেন টমেটো দিয়ে কিভাবে সস বানায়। আশা করছি টমেটো খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন

ওজন কমাতে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

যারা ওজন ও মেদ ভুড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা চাইলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে পারেন। একটি বিশেষজ্ঞদের মতে প্রমাণিত যে টমেটো খেলে আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তাররা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সুতরাং যারা ওজন বাড়াতে যাচ্ছেন তারা টমেটোকে এড়িয়ে চলবেন।কারণ এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন টমেটো খেলে ওজন কমে যায়।

টমেটো যাদের খাওয়া উচিত নয়

যদি কারো কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে তাহলে তাদের খাদ্য তালিকা থেকে টমেটো বাদ দেওয়া উচিত।কারণ আমরা জানি যে টমেটোতে অক্সালেট নামক একটি পদার্থ আছে।যার ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে অবদান রাখে। সুতরাং যদি আপনাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টমেটো খাবেন।

মেয়েদের গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

মেয়েদের গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা আছে।তবে অবশ্যই যদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়। গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম,ভিটামিন সি ও আয়রন অতি জরুরী।অনাগত শিশুর পুষ্টির বৃদ্ধিতে টমেটোতে থাকা উপাদান গুলো অত্যন্ত কার্যকরী।গর্ভকালীন সময় ঘন ঘন রক্তচাপ ও প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হয়।
তাই নিয়মিত টমেটো খেলে পটাশিয়াম সঞ্চালন বাড়ায়। যার ফলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।মেয়েদের গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে বিশেষ উপকার হচ্ছে টমেটো খাওয়ার ফলে স্তনে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি বাড়ে এবং চর্মরোগ প্রতিরোধ এবং পুষ্টি সরবরাহ দারুণ ভাবে অবদান রাখে।

শেষ কথা

টমেটো আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী এবং সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা তা এই পোষ্টের মাধ্যমে এতক্ষণ জানতে পেরেছেন।সবাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখবেন এবং নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করুন।তবে অতিরিক্ত খাবেন না,নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

এই আরর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তা হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে।এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আরর্টিকেলটি পরার জন্য ধন্যবাদ।সুস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে চোখ রাখুন আয়াত টিপসে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url