প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ

পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে করণীয় প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লেভেল পর্যন্ত বাংলা দ্বিতীয়পত্র সাবজেক্টে প্রতিবেদন লিখতে হয়। তাছাড়া জীবনের প্রায় অনেক কাজে প্রতিবেদন লেখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম আমরা স্কুল বা কলেজে ঠিকভাবে শিখতে পারি না।যার কারনে বাংলা সাবজেক্টে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী কম নাম্বার পেয়ে থাকে। 
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
তাই এই প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে তোমাদের জানাতে আজকের এই আর্টিকেল লেখা। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়লে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে শিখতে পারবে।
সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

প্রতিবেদন লেখার অনেক নিয়ম রয়েছে। এর জন্য বিভিন্ন বই বা বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে এর সঠিক নিয়ম খুঁজতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিব্রত অবস্থায় পড়ে যায়। কারন তোমরা আসলে জানো না যে কি প্রতিবেদন লিখতে যাচ্ছ।
এই দ্বিধা থাকার কারণে তোমরা ভুল নিয়মে প্রতিবেদন লিখে আসো। এতে করে বাংলায় সর্বোচ্চ নাম্বার তুলতে প্রায় কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই আজকের আর্টিকেলে প্রতিবেদন এর অর্থ কি, প্রতিবেদন কত প্রকারের হয়, প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

প্রতিবেদন এর অর্থ কি?

প্রতিবেদন হল এক ধরনের লিখিত নথি যার মাধ্যমে কোন প্রকার সমস্যা পরিস্থিতির ঘটনা বা ফলাফল গুলোকে একত্রে লিখে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন এর ইংরেজি শব্দ হলো Report যার বাংলা অর্থ হচ্ছে বিবৃতি ও সমাচার।

প্রতিবেদন হল কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধান করে তাকে সুন্দরভাবে বিবরণ আকারে উপস্থাপন করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া। প্রতিবেদন লেখার কিছু প্রয়োজনীয় ধাপ রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
  • বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা।
  • তথ্য সংগ্রহ করা।
  • তথ্যগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো।
  • কাগজে লিখা।
  • লিখিত বস্তুকে পুনরায় পরীক্ষা করা।
  • আবার কাগজে লিখে তৈরি করা।

প্রতিবেদন কত প্রকারের হয়?

প্রতিবেদনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তা হলঃ
  • উদ্দেশ্যের উপর।
  • আকার ও আকৃতির ওপর।
উদ্দেশ্যের ওপর আবার প্রতিবেদন কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন: তথ্যমূলক প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ প্রতিবেদন। আকার ও আকৃতির ওপর প্রতিবেদন কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন: আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনকে আবার বিভিন্ন শ্রেণীতেও ভাগ করা যায়। প্রতিবেদনের শ্রেণীগুলো নিম্নরূপঃ
  • সংবাদ প্রতিবেদন।
  • কারিগরি প্রতিবেদন।
  • তদন্ত প্রতিবেদন।
  • দাপ্তরিক প্রতিবেদন।
  • তদন্ত প্রতিবেদন
  • গবেষণামূলক প্রতিবেদন
  • অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন।
  • ঘোষণা প্রতিবেদন
  • নিয়মিত প্রতিবেদন
  • ক্রিয়া প্রতিবেদন
  • রাজনৈতিক প্রতিবেদন
  • সাংস্কৃতিক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন আমরা বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে লিখতে পারি। তা হতে পারে আপনার কোন নিজস্ব প্রতিবেদন বা মতামত, কোন প্রতিষ্ঠানিক মতামত, বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন ও কোন নির্দিষ্ট একটি বস্তু নিয়ে প্রতিবেদন। তবে স্কুল ও কলেজের প্রতিবেদনগুলো বেশিরভাগ সময় প্রতিষ্ঠানিক হয়ে থাকে।

প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও ভাষা কেমন হওয়া উচিত

প্রতিবেদন মূলত কোন একটি বিষয় বস্তুকে সকলের দৃষ্টি অবগতির জন্য লিখা হয়। এবং এই প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়বস্তুর ওপর দর্শকের মতামত নেয়া ও পাঠকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। নির্ধারিত বস্তুর বিষয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সঠিক বিশ্লেষণ করতে হবে।
এবং প্রতিটি বিষয়ের যুক্তি মূলক ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।তোমাদের লিখিত প্রতিবেদন পাঠক পূর্বে এবং বিশেষভাবে মূল্যায়ন করবে। এবং ওই বিষয়বস্তুর উপর পরামর্শ দিয়ে পাঠককে সচেতন করতে হবে। পরিশেষে এর ফলাফল কি হবে বা ওই বিষয়বস্তুর সিদ্ধান্ত কি হবে তা সঠিকভাবে প্রদান করা।

প্রতিবেদন লেখার সময় অবশ্যই স্পষ্ট ও সরল ভাষার হতে হবে। কোন প্রকার জটিল তথ্য বা শব্দ প্রয়োগ করলে প্রতিবেদনের মান নষ্ট হতে পারে। নির্ধারিত বস্তুর সম্পর্কের সংক্ষিপ্ত তথ্যপ্রধান করা এবং অতিরিক্ত কোন কথা প্রয়োগ না করা। অবশ্যই সকল তথ্য সত্য এবং কোন বাস্তব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে লিখতে হবে।

প্রতিবেদনের মাধ্যমে কাউকে অপমান মূলক কথা বা দৃষ্টিভঙ্গির কোন ব্যঙ্গ করা যাবে না। বিশেষ করে প্রতিবেদনের ভাষা সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহারের ফলে এটি উন্নত মানের প্রতিবেদন হতে পারবে। অবশ্যই তোমাদের প্রতিবেদন লেখার পূর্বে তা ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদনকে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে লিখতে হবে। এই নিয়মকে বিভিন্ন অংশে ভাগ দেওয়া হল। প্রতিবেদন লেখার পূর্বে একটি সঠিক ও বাস্তবসম্মত বস্তু নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশগুলো হল:
  • শিরোনাম
  • শিরোনামের পাতা
  • সূচিপত্র
  • মূল বক্তব্য
  • উপসংহার
শিরোনামঃ নির্ধারিত বস্তুর ওপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিতে হবে।শিরোনামটি অবশ্যই বাস্তব, সুন্দর ও আকর্ষণীয় হতে হবে। শিরোনামটি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং শিরোনাম এর মধ্যে প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তুর ধারণা দিতে হবে।

শিরোনামের পাতাঃ শিরোনাম দেওয়ার পর এর নিচে শিরোনামের পাতা তৈরি করতে হবে। শিরোনামের পাতায় প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা উপস্থাপন করতে হবে।

সূচিপত্রঃ নির্ধারিত বস্তুর প্রতিবেদনে আপনি কি কি বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছেন তার একটি সুচি তৈরি করতে হবে। সূজিপত্রে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধাপে ধাপে লিখতে হবে। যাতে সূচীপত্র দেখলে পাঠক বুঝতে পারে আপনি নির্ধারিত বস্তু সম্পর্কে কি তথ্য তুলে ধরতে চাচ্ছেন।

মূল বক্তব্যঃ মূল বক্তব্যে আপনার নির্ধারিত বস্তুর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য লিখতে হবে। এই অংশে অবশ্যই সূচিপত্রের ধাপ অনুসারে বিষয়বস্তু বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। মূল বক্তব্য লিখার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন বিষয়ে অতিরিক্ত কথা বা অতি বড় না করা হয়।

উপসংহারঃ উপসংহারে আপনি প্রতিবেদনের সকল বিষয়বস্তু নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্য উপস্থাপন করবেন। অবশ্যই মন্তব্যটি সুচিহ্নিত ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

অন্যান্য প্রতিবেদনের চেয়ে নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়ম অত্যন্ত সহজ। এই প্রতিবেদনে আপনার কোন একটি বিষয় বস্তু নির্ধারণ করে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হবে। নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিম্নরুপ:
  • প্রতিবেদকের নাম
  • প্রতিবেদনের শিরোনাম
  • প্রতিবেদনের সময়
  • প্রতিবেদনের তারিখ
  • প্রতিবেদকের ঠিকানা
  • প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য
নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার প্রথমেই প্রতিবেদকের নাম লিখতে হবে। এরপর প্রতিবেদনের শিরোনাম যাচাই করতে হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদনের সময় তারিখ ও প্রতিবেদকের ঠিকানা লিখতে হবে। এ সকল বিষয় লিখা হলে প্রতিবেদনের শিরোনাম অনুসারে মূল বক্তব্য প্রকাশ করতে হবে।

লেখককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মূল বক্তব্য অহেতু কোন কথা না থাকে। অবশ্যই মূল বক্তব্যকে একটি অনুচ্ছেদ আকারে লিখতে হবে। অতিরিক্ত বড় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মূল বক্তব্য লেখা হলে প্রতিবেদকের স্বাক্ষর সহজ জমা দিতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন মূলত কোন প্রতিষ্ঠানে ওপর ভিত্তি করে লিখা হয়। ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু মতামত প্রকাশ করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিম্নরূপ:

তারিখঃ 
বরাবর,
(যার নিকট প্রতিবেদন দেওয়া হবে তার পদবীর নাম লিখতে হবে)
প্রতিষ্ঠানের নামঃ 
প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাঃ 
বিষয়ঃ
 
জনাব,
এ অংশে বিনয়ের সাথে তারিখ ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে নির্ধারিত বিষয়বস্তুর ওপরে সংক্ষেপে বর্ণনা দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে এই অংশটুকু দরখাস্ত লিখার মতো লিখতে হবে। নির্ধারিত বস্তু সম্পর্কে লিখা হলে যার নিকট প্রতিবেদন দেওয়া হবে তার নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন শেষ করতে হবে।

প্রতিবেদনের শিরোনামঃ
প্রতিবেদকের স্বাক্ষরঃ
প্রতিবেদনের বিষয়ঃ
প্রতিবেদনের সময় ও তারিখঃ
প্রতিবেদকের নাম ও সঠিক ঠিকানাঃ

উপরুক্ত নিয়ম মেনে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লিখতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার জন্য অবশ্যই বিনয় ও সম্মানের সাথে লিখতে হবে। অযথা কথা লিখা থেকে বিরত থাকতে হবে। আকর্ষণীয় বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

সংবাদ প্রতিবেদনের প্রথমে শিরোনাম দিয়ে শুরু করতে হবে। শিরোনামে আপনার নির্ধারিত বিষয়বস্তু ভালোভাবে প্রকাশ করতে হবে এবং আকর্ষণীয় শিরোনাম বাছাই করতে হবে। এরপর ভূমিকা অংশ দিয়ে শুরু করতে হবে। ভূমিকা অবশ্যই ছোট করে লিখতে হবে।এবং এই ছোট অংশে আপনাকে পুরো প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।

এরপর আপনি যে বিষয়বস্তুটি নির্ধারণ করেছেন তা কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখছেন তার সূত্র দিতে হবে। সংবাদ প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির নাম পরিহার করতে হবে। নামের পরিবর্তে যার নিকট প্রতিবেদন পেশ করা হবে তার পদবী লিখতে হবে। এর পরের অংশে আপনাকে প্রতিবেদনের সময় ও তারিখ উল্লেখ করে সম্পূর্ণ তথ্য যথাযথভাবে আলোচনা করতে হবে। সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিম্নরূপঃ

প্রতিবেদনের প্রকৃতিঃ 
প্রতিবেদনের বিষয়ঃ 
প্রতিবেদনের তারিখঃ 
প্রতিবেদনের সময়ঃ 
প্রতিবেদনের স্থানঃ
শিরোনামঃ 
সম্পূর্ণ বিবরণঃ 
সূত্রঃ (আপনি যে সংবাদপত্র থেকে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন তার নাম উল্লেখ করতে হবে)
প্রতিবেদকের স্বাক্ষরঃ

প্রতিবেদনে কি খাম লিখতে হয়?

অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে থাকে যে, প্রতিবেদনে কি খাম লিখতে হয়? প্রতিবেদনে কোন খাম লিখতে হয় না। প্রতিবেদন শেষে প্রতিবেদক ও প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু তথ্যের ছক প্রকাশ করতে হয়। কিছু কিছু প্রতিবেদন দেখতে দরখাস্ত ও পত্রের মতো হলেও এতে কোন খাম লিখে দিতে হয় না।

লেখকের মন্তব্য

এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পরে অবশ্যই জানতে পেরেছেন প্রতিবেদনের অর্থ কি, প্রতিবেদন কত প্রকার ও প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সহ সকল তথ্য। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।

অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হয়।প্রতিবেদন সম্পর্কে আরো কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। অতি দ্রুত আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url