আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা প্রিয় পাঠক,আজকের পোস্টে আনারস খাওয়ার উপকারিতা,আনারস খাওয়ার অপকারিতা, আনারসের পুষ্টিগুণ, খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়?, আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়?এ সকল বিষয় নিয়ে এবং আনারস সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
যদিও আনারস সকলের প্রিয় ফল না কিন্তু আনারসে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের
জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই আনারস সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি
অবশ্যই পড়ুন।
সূচিপত্রঃ আনারস খাওয়ার উপকারিতা
ভূমিকা
আমরা প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কোন না কোন ফল রেখে থাকি। কিন্তু খাদ্য তালিকায়
রাখা এই ফল আমাদের শরীরে কি রকম পুষ্টি সমৃদ্ধ করছে সে সম্পর্কে আমরা কেউ তেমন
ভাবি না। ফলে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত সাহায্য
করে থাকে।শরীর সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সৌন্দর্য
বৃদ্ধি সহ আরো নানা রকমের কাজে আনারস ফল আমাদের শরীরে কাজ করে।
তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আনারস আমাদের শরীরের নানা কাজে সহায়তা করে। আনারস টক
স্বাদ যুক্ত ফল তাই আমরা অনেকেই একে পছন্দ করি না। আনারস যেমন আমাদের শরীরের
উপকার করে তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারও করে থাকে। তাই নিয়ম মেনে আনারস
খাওয়াই উত্তম। আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নিচে ব্যাখ্যা করা
হলো।
আনারসের পুষ্টিগুণ
আনারস সম্পর্কে সকল তথ্য জানার আগে জানতে হবে আনারসের পুষ্টিগুণ। আনারস একটি
সুস্বাদু ও রসালো ফল। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এবং রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আরো রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফসফরাস, প্রোটিন, ফ্যাট
,খনিজ পদার্থ, আরো অনেক ধরনের পুষ্টি গুণ। ১০০ গ্রাম আনারসে প্রায় ৫০ গ্রাম
ক্যালোরি পাওয়া যায়।
আনারস আশ সমৃদ্ধ একটি ফল যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য
করে। আনারসের বিদ্যমান ফাইবার আমাদের শরীরের মাংসপেশী কে শক্ত রাখে। তাছাড়া
আনারস খাওয়ার ফলে আমাদের মাড়ি মজবুত থাকে।
এ সকল উপাদান আমাদের শরীরের কোষ কে ক্ষয় রোধ করে। আনারস আমাদের শরীরের নানান
পুষ্টি গুণ সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।আনারস খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে আমরা সহজে অসুস্থ হবো না। তাই আমাদের উচিত
নিয়ম করে আনারস খাওয়া যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
আনারস বেশি হয় কোন অঞ্চলে
আনারস বেশি হয় কোন অঞ্চলে এরকম প্রশ্ন মাথায় আসলেই প্রথমে বলা হবে বাংলাদেশের
পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে আনারসের চাষ বেশি হয়।পার্বত্য জেলা যেমন: রাঙ্গামাটি,
খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এ সকল এলাকায় আনারস চাষ বেশি দেখা যায়।এছাড়াও
মৌলভীবাজার,সিলেট,টাঙ্গাইল,নরসিংদী ইত্যাদি জেলায়ও আনারসের চাষ দেখা যায়।
এ সকল এলাকায় আনারস চাষীদের জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে আনারসের বিশেষ ভূমিকার
রয়েছে। বান্দরবন জেলার চাষীরা আনারস চাষে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে। পাহাড়ে ঢালু
মাটিতে কুপিয়ে বন জঙ্গল পরিষ্কার করে আনারস চাষ করার মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী
হয়ে উঠেছে। তাছাড়া পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির গুইমারা রামগড় মানিকছড়ি ও
মহালছড়ি উপজেলাগুলোতে আনারস চাষ করা হচ্ছে।
আনারস খাওয়ার উপকারিতা
আনারস আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। এটি একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। নিচে
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ আনারস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। আনারসে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ এর ফাইবার ও স্বল্প পরিমাণের ফ্যাট যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত
চর্বি কমিয়ে ফেলে। সালাদ হিসাবে বা আনারসের জুস বানিয়ে খেলে তা আমাদের শরীরের
ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
হাড় গঠনঃ আনারসের রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয়
পুষ্টিগুণ উপাদান। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় গঠনে সাহায্য করে। এবং
ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরে হারকে মজবুত করে। সুতরাং যাদের হাড়ের সমস্যা আছে
তারা নিয়মিত আনারস খেতে পারেন এতে করে হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
পুষ্টির অভাব দূরীকরণঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন। একে
বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টির উৎস বললেও চলে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি,
ভিটামিন বি, কেলসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার আরো অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ। তাই
শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির অভাব পূরণে আনারস বেশ ভূমিকা পালন করে।
চোখকে সুস্থ রাখাঃ আনারস চোখের ম্যাকুলা ডিগ্রেডেশন রোগ থেকে মুক্ত
করে। এ রোগের কারণে আমরা ধীরে ধীরে চোখে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলি। আনারসে
রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। তাই নিয়মিত আনারস খাওয়ার ফলে ৩০ শতাংশ ম্যাকুলা
ডিগ্রেডেশন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষাঃ আনারসে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁতের
সুরক্ষা করে। আনারস খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁতে বা মাড়িতে পোকার আক্রমণ থেকে বাধা
দেয়। এতে করে আমাদের দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষা হয়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর
ব্রোমেলিন।ব্রোমিলিন আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।তাই যাদের হজম শক্তি কম বা বদ
হজমের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত আনারস খেতে পারেন।
রক্ত জমাট হতে বাধা দেয়াঃ আনারস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত
পরিষ্কার হয়। হৃদপিন্ডের রক্ত পরিষ্কার রাখার কারণে বিভিন্ন রক্তনালীতে জমাট
বাঁধে না। এ সকল রক্তনালী পরিষ্কার রাখা ও নালিগুলোতে রক্ত যাতে জমাট না বাদে
সেজন্য নিয়মিত আনারস খাওয়া উত্তম।
আনারস খাওয়ার অপকারিতা
১.আনারস খাওয়ার ফলে শরীরে মাত্রা অতিরিক্ত এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি
নারী ও পুরুষের উভয়ের শরীরেই হতে পারে। এই এলার্জি দেখা ডিলিট ঠোঁট চোখ ও শরীরের
বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যেতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তারা আনারস
খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
২. গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের
আনারস খাওয়া একেবারেই নিষেধ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে গর্ভ অবস্থায় আনারস খেলে
গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. যাদের বাতের ব্যথা সমস্যা আছে তারা আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ আনারস
খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে যাওয়া আর সাথে সাথে অ্যালকোহলে
পরিণত হয়। যার ফলে শরীরে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে।
৪. আনারসে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে। যার ফলে অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার কারণে
ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস
খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
৫. অসুস্থ থাকার ফলে যদি আপনি এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে আনারস
খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি যদি আনারস খেয়ে
থাকেন তাহলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
৬. অনেকেই আমরা কাঁচা আনারসের জুস খেতে পছন্দ করি। আনারস কাঁচা থাকার অবস্থায়
বিষাক্ত হয়ে থাকে। তাই কাঁচা আনারসের জুস বা কাঁচা ফল খাওয়ার ফলে বমি হওয়ার
প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
৭. কাঁচা আনারস খাওয়ার ফলে আমাদের পেটে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ কাঁচা আনারস
খাওয়ার পর এটি আমাদের মুখে ও গলায় শ্লেমা জাতীয় পদার্থ তৈরি করে যা একসময়
পেটের ব্যথার কারণ হতে পারে।
আনারস খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি তা অতিরিক্ত খাওয়ার পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই আনারস খাওয়ার সময় অবশ্যই আমাদের পরিমান মত খেতে
হবে।এবং উপরোক্ত বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন রোগ রয়েছে।
যেমন: ডায়াবেটিস, এলার্জি, গর্ভবতী মহিলা বা যাদের বাত ব্যথা রয়েছে তারা আনারস
খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।আশা করি আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে
সকলকেই কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি।
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়?
আনারস খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কারণে আনারস খেয়ে থাকে।
তেমনি খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়? এই প্রশ্ন সকলের মনেই জাগে।খালি পেটে আনারস
খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয়
চর্বি কমে যায়। যা আমাদের ডায়েট করতে সাহায্য করে। তাছাড়া অনেকেরই কৃমি
সমস্যায় ভুগে থাকেন। পেটে অতিরিক্ত কৃমি হলে খালি পেটে আনারস খাওয়ার ফলে তা কমে
যেতে পারে।
তাছাড়া আনারসের রয়েছে এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই খালি পেটে আনারস খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন সি
,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে করে আমাদের শরীর অসুস্থ হওয়ার
সম্ভাবনা কমে যায়।
তাই এ সকল রোগে যারা ভুগছেন তারা অবশ্যই খালি পেটে আনারস খেয়ে দেখবেন। এবং
অন্যান্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আনারস খাবেন।
আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়?
অনেক মহিলারাই অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যায় ভুগেন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন মাত্রা
,অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ও পুষ্টিহীনতায় ভোগার কারণে মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ড
হয়ে থাকে।যার ফলে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে ও শারীরিক
নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
খাওয়ার কথা বলা হয়। আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের
দুর্বলতা কমিয়ে ও পুষ্টিহীনতা ভোগার থেকে রক্ষা করে। আনারস শরীরের প্রদাহ কমিয়ে
থাকে।
আনারস ফল টক জাতীয় হওয়ার কারণে আনারস খেলে মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা
থেকে রক্ষা পেতে পারে। যদি মনে প্রশ্ন জাগে আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়? তাহলে
এটার উত্তর হবে হ্যাঁ আনারস খেলে পিরিয়ড হয়।
লেখকের মন্তব্য
ফল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাবার। ফলে থাকা বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। তেমনি
আনারস ও আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ এতে অসংখ্য পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে।
আনারস খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে তাই অতিরিক্ত আনারস
খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো তাছাড়া যারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য
আনারস না খাওয়াটাই উত্তম। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। আনারস
সম্পর্কে সঠিক তথ্য সকলকে জানাতে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url