কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় বন্ধুগণ আজকে আপনাদেরকে জানাবো কিসমিস ভেজানো পানি
খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম এবং প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস
খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেকেই জানে।তবে কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
এবং কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। তাই সেই
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
সারারাত পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখলে কিসমিসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সহজে
দ্রবণীয় হয়ে থাকে।যার ফলে কিসমিসের পুষ্টিগুণ আরো ভালোভাবে এবং বেশি পাওয়া
যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে কিসমিস না খেয়ে শুধু কিসমিসের পানি খেলেও ভিটামিন ও
মিনারেল শরীরে ভালোভাবে প্রবেশ করে।তাই কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম এবং
কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন।
কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস ভেজানো পানির মধ্যে এত পরিমান উপকারিতা আছে যে আপনারা যদি নিয়ম মেনে
কিসমিস ভেজানো পানি খেতে পারেন। তাহলে আপনাদের শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এর মত
সমস্যা দূর হতে পারে।তাহলে চলুন কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা
যাক।
আরো পড়ুনঃ থাই পেয়ারা চাষ করার নিয়ম
প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে দুই কাপ পানি নিতে হবে।তারপরে পরিমাণ মতো কিছু
কিসমিস নিয়ে ভালোভাবে কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে।পরে দুই কাপ পানি ভর্তি বাটিতে
কিসমিস গুলো ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
কিসমিস গুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখার পরের দিন সকালে কিসমিস গুলো ছেকে নিয়ে সেই
পানিটি খেতে পারেন।সবথেকে ভালো হয় যদি একটু হালকা গরম করে নিলে।তার পর খালি পেটে
পানিটি খাবেন।অবশ্যই সকালে নাস্তা খাওয়ার মিনিমাম ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে কিসমিস
ভেজানো পানি খাবেন।
কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সবাই জানি কিসমিস একটি স্বাস্থ্য সম্পন্ন খাবার।কিসমিসে আছে আয়রন
ক্যালসিয়াম ফাইবার পটাশিয়াম অন্যান্য অধি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ। যা আমাদের
শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শরীরকে সতেজ ও তরতাজা রাখতে সাহায্য করে।তাহলে চলুন
আর দেরি না করে কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা আরো বিস্তারিত জানি।
ব্লাড প্রেসার ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি গুলোর মধ্যে বিশেষ একটি পদ্ধতি হলো কিসমিস। কিসমিস
ভেজানো পানি খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার কে
বসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা কমায়ঃ প্রতিদিন নিয়মিত কিসমিস খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন
আমাদের শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেকটাই বাড়ায়।এছাড়া কিসমিসে
প্রচুর পরিমাণ লৌহ আছে। যা আমাদের শরীরের লোহিত কণিকা তৈরি করতে ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স ও কপার দরকার হয়। সেটা আমরা কিসমিস ভেজানো পানি থেকে পেয়ে থাকি।
লিভারও কিডনি পরিষ্কারঃ গবেষণার মধ্যে পাওয়া গেছে কিসমিস ভেজানো পানি
খেলে লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কারণ কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে শরীরের
জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয়। যার ফলে রক্ত পরিষদিত হতে শুরু করে।
এবং আমাদের লিভার পরিষ্কার রাখে পাশাপাশি আমাদের কিডনিও ভালো রাখে।
ত্বক সুস্থঃ সাধারণত আমরা অনেকেই ত্বকের সমস্যায় ভুগি।আমাদের ত্বককে
সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে কিসমিস ভেজানো পানি খুব উপকারী। কারণ কিসমিসে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি,জিংক এর মত সম্মিলিত প্রক্রিয়া ত্বককে সুস্থ এবং
সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
আয়রনের ঘাটতি কমায়ঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি
খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি অনেকটাই দূর করে।শুধু তাই নয় তার
পাশাপাশি আমাদের শরীরের রক্তের লাল কণিকার পরিমাণও বাড়ায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ একটি মানুষ সুস্থ এবং ভালো থাকার জন্য হজম শক্তি অতি
জরুরী। এক্ষেত্রে আপনি কিসমিস ভেজানো পানি খেতে পারেন। এতে হজম শক্তি বাড়ে এবং
পেটের মধ্যে থাকা এসিডিটি থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন ওষুধ ছাড়াই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ বর্তমানে অনেকেই অল্প কিছুতেই রোগে আক্রান্ত হয়ে
পড়ে। তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে অতি জলদি রোগে আক্রান্ত
হয়ে পড়ে। তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন সকালে
কিসমিসের ভেজানো পানি খেতে হবে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। যা শরীরের থাকা রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম হয়।
হাড় মজবুত রাখেঃ আমরা জানি কিসমিসে বোরন রয়েছে।এই বোরনে রয়েছে আরও অনেক
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান।যেমন:ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস। এ সকল উপাদান
হাড় গঠন করে এবং শরীরে টেসটোসটেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বজায় রাখে। তাই
নিয়মিত কিসমিস ভেজানোর পানি ও কিসমিস খাওয়ার ফলে এরকম সমস্যা থেকে সহজেই
সুরক্ষা পাওয়া যায়।
চোখের সুরক্ষা করেঃ কিসমিসে রয়েছে পলিফেনল নামক উপাদান। এই পলিফেনের
উপাদান আমাদের চোখের ফ্রি রেডিকেলস ধ্বংস করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
তাই নিয়মিত কিসমিস খেলে বৃদ্ধ বয়সে দৃষ্টিহীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে
যায়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি পায় এবং পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ে । কিসমিসে থাকা ম্যাগনেসিয়া,
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস মস্তিষ্কের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। যার ফলে আমাদের
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের আরো অনেক উপকারে আসতে পারে যেমনঃ
- কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁত ও মাড়ি মজবুত হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীরা কিসমিস খেলে তাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
- কিসমিস খেলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার থাকে।
- কিসমিস ভেজানো পানি খেলে আমাদের শরীর বিষমুক্ত হয়।
- নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ফলে ছেলেদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কিসমিস খেয়ে শরীরের উপকার করার জন্য অবশ্যই এটি পরিমিত খেতে হবে। আমরা অনেকেই
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানিনা। যেহেতু কিসমিসে প্রচুর
পরিমাণ এর পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন খনির উপাদান রয়েছে তাই এটি পরিমিত না খাওয়ার ফলে
শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের ধারনা, প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া
উচিত। এবং যদি কিসমিস ভেজানো পানি খেতে চান তাহলে সারারাত কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে
তা সকালে খেলে উপকার মিলবে অনেক। পরিমিত না খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা
দেখা দিতে পারে।
দুধ ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
দুধ আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকার করে। দুধকে আমিষ খাবার বলা হয়। শুধু দুধ খাওয়ার
যে উপকারিতা দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার উপকারিতা কিন্তু কম নয়। এই দুইটি
উপাদান একসাথে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন জটিলতা কমে যাবে। চলুন তাহলে দুধ
ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।
- কিসমিস একটি তন্তু জাতীয় খাবার। দুধ ও কিসমিস একসাথে খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে।
- পর্যাপ্ত পরিমান দুধ ও কিসমিস খেলে সোডিয়াম এর মাত্রা ঠিক থাকে। ফলে উল্টো রক্তচাপ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- যাদের ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজের সমস্যা রয়েছে। তারা নিয়মিত দুধ ও কিসমিস খেতে পারেন।
- দুধে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই দুধ ও কিসমিস একসাথে খেলে ক্যান্সার রোগ থেকে নিরাময় হওয়া যায়।
- গরম দুধ ও কিসমিস একসাথে ফেলে ম্যাজিকের মত রক্তস্বল্পতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয় ।
- দুধ ও কিসমিস একসাথে মিশালে এতে পলোফেলেনিক ফাইটোনিউট্রিয়ন্স উপাদান তৈরি হয় । যা চোখের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
- কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা রয়েছে। দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার ফলে এতে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, ও স্যালিনিয়ন উপাদান বেড়ে যায়। যাদের রক্তে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত দুধ ও কিসমিস একসাথে খেতে পারেন।
- নিয়মিত দুধ ও কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর হয়।
- শিশুদের জন্য দুধ ও কিসমিস অনেক উপকারী। দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার ফলে শিশুদের হাড়ের বিকাশ ভালো হয়।
- নিয়মিত দুধ ও কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরে দুর্বল লাগা মাথা ঘোরা ও কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় না।
শেষ কথা
নিজেকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা এতক্ষণ সবাই
জানতে পেরেছেন। আশা করছি সবাই নিয়ম-নীতি মেনে তারপরে খাবেন। কারণ সবকিছুই একটি
নিয়ম আছে যদি নিয়ম না মেনে খান তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আমার আর্টিকেলটি পরে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করবেন। এবং আরো কিছু তথ্য জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন আমি অতি দ্রুত
আপনার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।
সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ 😊