বিড়াল পোষা কি জায়েজ এবং বিড়াল পালনের উপকারিতা জানুন
পালং শাক খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা জানুন
প্রিয় পাঠক আপনিও কি ঘরে বিড়াল পালতে চান। তাই বিড়াল পালনের উপকারিতা, বিড়াল
পালনের নিয়ম, ইসলামের চোখে বিড়াল পোষা কি জায়েজ, ঘরে বিড়াল থাকলে কি নামাজ
হবে ও বিড়াল পালনের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন?
তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে বিড়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য
বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার পর বিড়াল পালন সম্পর্কে
আপনার মনে আর কোন কৌতুহলীয় প্রশ্ন থাকবে না। তাই অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি
পড়ুন।
সূচিপত্রঃ বিড়াল পালনের উপকারিতা জানুন
ভূমিকা
আমরা অনেকেই সখের বসে বিড়াল পুষি। বিড়াল খুব শান্ত স্বভাবের ও পরিষ্কার প্রাণী।
সঠিক যত্ন ও আদরের মাধ্যমে বিড়াল এক সময় পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর হয়ে যায়।
অন্যান্য প্রাণীর মতো বিড়াল প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারেনা।
তাই আপনি যদি বিড়াল পাল্টাতে চান তাহলে এর পূর্বে আপনাকে কিছু নিয়ম ও তথ্য
জানতে হবে। সে সকল নিয়ম ও তথ্য সম্পর্কে ও বিড়াল পালনের উপকারিতা সম্পর্কে
আজকের আর্টিকেলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বিড়াল পালনের নিয়ম
বিড়াল পালনের পূর্বে অবশ্যই বিরল পালনের সঠিক নিয়ম জানতে হবে। নতুবা আপনার শখের
পোষা বিড়ালটি আদর ও যত্নের অভাবে মারাও যেতে পারে। বিড়াল পালনের নিয়ম অত্যন্ত
সহজ। বিড়াল পালনের পূর্বে যে সকল নিয়মগুলো আপনাকে জানতে হবে তার নিম্নরূপ:
বিড়ালের খাবার তালিকা
বিড়াল পালার পূর্বে অবশ্যই বিড়ালের খাবার তালিকা ঠিক রাখতে হবে। বিড়াল সাধারণত
মাছ মাংস দুধ মাছের কাঁটা ও হাড় পছন্দ করে। তাই বিড়াল পালার সময় অবশ্যই আপনাকে
নিয়ম মেইনটেইন করে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে। বিড়াল প্রতিদিন একই খাবার খেতে
পছন্দ করে না। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন খাবার কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া।
নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করা
আমরা ঘরের পোকামাকড় মারার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন বিষ ব্যবহার করে থাকি। এ সকল
বিষ ঘরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিই। যা একটি বিড়ালের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনতে
পারে। তাই বিড়াল পালনের পূর্বে অবশ্যই এই সকল জিনিস থেকে বিরত থাকবেন।
বিপদজনক বিষয়বস্তু ঠিক করা
আমরা প্রায় অনেক সময় চুলা অকারণে জ্বালিয়ে রাখি। আর এই চুলা জ্বালিয়ে রাখার
ফলে বিড়ালের অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ বিড়াল এগুলো কিছুই বুঝতে পারে
না। আবার ঘরের বৈদ্যুতিক লাইন বা তারের আশেপাশে পানি ফেলে রাখি এতে করে বিড়াল
সেই পানি খেতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক খেতে পারে। তাই আমাদের উচিত এ সকল বিষয়বস্তু
থেকে বিরত থাকা।
সঠিক সময় টিকা দেওয়া
একটি বিড়াল জন্মের পর তাকে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। ঠিকানা দেওয়ার ফলে সে নানান
রকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিড়ালের তিন মাস বয়স হলে সে জলাতঙ্ক টিকা দেওয়ার
উপযুক্ত হয়। জলাতঙ্ক টিকা দেওয়ার কারণে বিড়ালের আছর থেকে কোন সমস্যা সৃষ্টি
হয় না এবং বিড়াল সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা বিভাগে মোট কয়টি নদী আছে
উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে অবশ্যই আমাদের বিড়াল পালন করতে হবে। নয়তো শখের বসে
বিড়াল পালন করতে গিয়ে নানান রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
বিড়াল পালনের উপকারিতা
বিড়াল পালনের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। বিড়াল পালন করার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য
ভালো থাকে। নিচে বিড়াল পালনের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য ব্যাখ্যা করা হলো:
১. আমাদের মধ্যে যাদের রাগ বেশি তারা বিড়াল পুষতে পারেন। কারণ বিড়াল একটি শান্ত
ও পরিষ্কার প্রাণী। বিড়াল বাসায় থাকলে মন ভাল থাকে এবং রাগ কমে যায়। বাড়িতে
একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি হয়।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
২. বিড়াল সবসময় মানুষের সাথে ঘুমাতে পছন্দ করে। তাই বিড়াল যদি আপনার সাথে
ঘুমায় তাহলে আপনার ঘুম ভালো হবে। বলতে গেলে বিড়াল আপনার ঘুমের পাহারা ধারের
ভূমিকা পালন করবে।
৩. বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে যদি শিশু একটি বিড়ালের সাথে খেলা করে বা
সব সময় সময় কাটায় তাহলে ওই শিশুর মেধা ভালো হয়।
৪. আপনি যদি বাসায় বিড়াল পালেন তাহলে আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন এবং
অতিরিক্ত টেনশন থেকেও মুক্তি পাবেন এতে করে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে।
৫. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নারীরা বিড়াল অনেক পছন্দ করে। তাই যে সকল
পুরুষ বিড়াল পালন করে নারীরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারা মনে করে যে সকল পুরুষ
বিড়াল পালে তারা নারীদের প্রতি যত্নশীল হবে।
৬. বিড়াল সাধারণত টিকটিকি, ইঁদুর, তেলাপোকা আরো অনেক পোকামাকড় মেরে ফেলে। তাই
আপনার বাসায় যদি বিড়াল থাকে তাহলে এ সকল ক্ষতিকর পোকামাকড় কমে যাবে।
৭. বিড়াল পালনের আপনার একাকীত্ব কেটে যাবে। বিড়াল পালনের কারণে মানুষের মনে
শান্তি আসে। যার ফলে আপনার মনের কষ্ট ও সারা দিনের ক্লান্তি ,একাকীত্ব কেটে যায়।
৮. রাশিয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিড়াল থাকার কারণে ঘরে কোন প্রকার
অপশক্তি হয় না। তাই বলা যেতে পারে বিড়াল পালন করার ফলে আপনার ঘরে কোন অপশক্তি
ভর করবে না।
৯. আপনারা যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভোগেন তারা বিড়াল পালতে পারেন। কারণ
বিড়ালের ডাক এক ধরনের থেরাপির মতো কাজ করে।
পরিশেষে বলা যায় বিড়াল পালনের ফলে আপনি বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন এবং
আপনার মনে প্রশান্তি আসবে।
ইসলামের চোখে বিড়াল পোষা কি জায়েজ
ইসলামের চোখে বিড়াল পোষা জায়েজ। বিড়াল পুষলে ইসলামে কোন অসুবিধা নেই। কারণ
বিড়াল একটি পরিষ্কার প্রাণী। তবে বিড়াল পোষলে বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে
হবে। ইসলামে বলা আছে বিড়ালের ওপর কোন অত্যাচার বা ব্যয় বিচার হলে অবশ্যই তাকে
গুনাগার হতে হবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ও বিড়াল
পালতেন। ইসলামের বিভিন্ন হাদিসের বিড়াল পালনের কথা উল্লেখ রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত
আছে।
এক মহিলাকে বিড়ালের জন্য আজাদ দেওয়া হয়েছিল। কারণ সে মহিলাটি বিড়ালটিকে আটকে
রেখে দিয়েছিল এবং বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। ফলে সে মহিলাটি জাহান্নামে গিয়েছে।
কারণ মহিলাটি বিড়ালটিকে আটকে রেখেছে খাবার ও পানি দেয় নি। আবার বিড়ালটিকে
ছেড়েও দেয়নি যাতে করে বিড়ালটি জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।
যে ব্যক্তি পশু পাখির ওপর দয়া দেখাবে মহান আল্লাহ তা'আলা তাকে দয়া করেন। অনেক
সওয়াব দেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে দয়াবান্ধের উপর আল্লাহর দয়া করেন। যারা
জমিনের বসবাসকারীদের প্রতি দয়া দেখায় তাকে আল্লাহ তায়ালা দয়া করে।তাই বলা
যায় ইসলামে বিড়াল পালনে জায়েজ রয়েছে।
ঘরে বিড়াল থাকলে কি নামাজ হবে
ইসলামে যেহেতু বিড়াল পালা জায়েজ রয়েছে তাই ঘরে বিড়াল থাকলে নামাজ হবে ও রহমতে
ফেরেশতারাও আসবে। বিড়াল একটি শান্ত স্বভাবের পরিষ্কার প্রাণী। তারা নিজেদের শরীর
নিজেরাই পরিষ্কার করে রাখে। তারা ময়লা খাবার খায় না এবং ময়লা জায়গায় শুতেও
পছন্দ করে না।
তাই বিড়ালকে পরিষ্কার প্রাণী বলা হয়। ইসলামে ও বিড়াল সম্পর্কে অনেক হাদিস
রয়েছে। এবং বিড়াল পালন জায়েজ করা হয়েছে। তাই ঘরে বিড়াল থাকলে নামাজ হবে। যদি
কেউ বলে বিড়াল আসলে নামাজ হয় না তাহলে বুঝতে হবে কথাটি সঠিক নয়।
বিড়াল কি মানসিক স্বস্তির জন্য ভালো
আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের জন্য ও মানসিক চাপে আমরা মানসিক অশান্তিতে ভুগি ।
তখন মনের মধ্যে অবসাদ একাকীত্ব ও দুশ্চিন্তা কাজ করে। এতে করে আমাদের দৈনিক কাজে
আমরা মন বসাতে পারি না। এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি বাসায় বিড়াল পালতে
পারেন।কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিড়াল মানসিক স্বস্তির জন্য ভালো।
বিড়ালের ডাক এক ধরনের থেরাপি হিসেবে কাজ করে। যা আমাদের বাহিরের বিভিন্ন শব্দ
থেকে মস্তিষ্ককে কিছুটা শান্তি প্রদান করে। তাছাড়া বিড়ালের সাথে খেলা করা তাদের
যত্ন করা এবং বিড়ালকে ছোট থেকে বড় হতে দেখা এ সকল বিষয়গুলো আপনার মনে এক ধরনের
প্রশান্তি সৃষ্টি করে যার ফলে আপনার মস্তিষ্ক ঠান্ডা হয় ও বিভিন্ন মানসিক চাপ
থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিড়াল কি মানসিক স্বস্থির জন্য ভালো এই প্রশ্নের উত্তরে
বলা যায় হ্যাঁ বিড়াল মানসিক স্বস্তির জন্য অনেক ভালো।
বিড়াল পালনের অপকারিতা
আমরা তো শখের বসে অনেকেই বিড়াল পুষি। কিন্তু সঠিক যত্ন না করা হলে এই শখের পোষা
বিড়ালটিও আপনার বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। চলুন তাহলে বিড়াল পালনের অপকারিতা
সম্পর্কে জানা যাক।
- সঠিক সময়ে বিড়ালকে টিকা না দেওয়া হলে বিড়ালের কামড় বা আছরে আপনি জলাতঙ্কর রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিড়ালের যখন তিন মাস বয়স হবে তখন তাকে ফ্লু এর টিকা দিতে হবে। এই ফ্লু এর টিকার মেয়াদ ১ বছর হয়ে থাকে। তাই এক বছর পর পর আপনাকে এই টিকাটি বিড়ালকে দিতে হবে। এতে আপনার ব্যয় এর পরিমাণ বেড়ে যাবে।
- বিড়াল পালনের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে যাচাই করতে হবে যে আপনার বিড়ালে কোন প্রকার এলার্জি আছে কিনা। যদি আপনার বিড়ালে এলার্জি থাকে তাহলে বিড়াল পালনের কারণে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
- বিড়াল সবসময় একই খাবার খেতে পছন্দ করে না। তাছাড়া সে সব রকম খাবার খেতেও পছন্দ করে না। তাই বিড়ালের খাবার আপনাকে প্রতিদিনই মাছ মাংস রাখতে হবে। এতে করে আপনার প্রচুর অর্থ খরচ হতে পারে।
- বিড়াল পালন অতি ব্যয়বহুল হলেও বিড়াল আপনাকে মানসিক শান্তি দিতে পারবে।
লেখকের মন্তব্য
যাদের মনে প্রশ্ন ছিল ইসলামের চোখে বিড়াল পোশাকি জায়েজ নাকি আশা করি তারা সঠিক
উত্তর পেয়ে গেছো এতক্ষণে। এবং বিড়াল পালনের উপকারিতা সম্পর্কে সহ অন্যান্য তথ্য
জানতে পেরেছো।আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করবেন।আর্টিকেলটা এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
আয়াত টিপসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url